শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত নেতারা, চুপচাপ তৃণমূল

বেহাল জাপার অঙ্গসংগঠন

সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বেহাল দশা চলছে। অঙ্গসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের কর্মকাণ্ড রাজধানীতে জাতীয় পার্টির সভা-সমাবেশে এইচ এম এরশাদকে মুখ দেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অনেকে আবার ব্যস্ত নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। সারা দেশে সংগঠন ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেই। আর চুপচাপ তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পার্টির সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে নতুন করে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত এক বছরে জাতীয় পার্টি অনেক কর্মসূচি পালন করে। গত কয়েক মাস বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কারণে বিভিন্ন জেলার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। রোজার আগে বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলন করা হবে। রোজার পর সারা দেশের সম্মেলন শেষ হবে। তিনি বলেন, ৩০ মে জাতীয় পার্টির বরিশাল জেলা সম্মেলন এবং ১০ জুন সুনামগঞ্জ, ১৩ জুন চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ, ১৪ জুন চট্টগ্রাম জেলা সম্মেলন। এ ছাড়া ৫ জুন চট্টগ্রামে জাতীয় যুব সংহতির সম্মেলন, ৭ জুন স্বেচ্ছাসেবক পার্টির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি সরকারের ব্যর্থতা ও গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রাজপথে এবং জাতীয় সংসদে সোচ্চার রয়েছে। মানব পাচার বন্ধ, পয়লা বৈশাখে এক নারীকে লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে রাজপথে মাঠে নামছে জাপা।
জাতীয় যুব সংহতি : ৭৬টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে নামকাওয়াস্তে কমিটি আছে ৭৩টিতে। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে ৩৫ ও আহ্বায়ক কমিটি ৩৮ জেলায়। তিন জেলায় কোনো কমিটি নেই। বর্তমান কমিটির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ভূইয়া জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ নিয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত। এরশাদের এপিএস হিসেবেও কাজ করেন। ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যও রয়েছে। সম্পাদক বেলাল হোসেন দলীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার এপিএস ও ওয়াসার ঠিকাদারি নিয়ে ব্যস্ত। ঢাকার বাইরে সংগঠনের কর্মসূচি থাকলে তিনি তাতে অংশ নেন। জাতীয় মহিলা পার্টি : মাস ছয়েক আগে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি ও নাজমা আকতারকে সরিয়ে কোনো কাউন্সিল ছাড়াই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলাম এমপিকে সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জের অনন্যা হোসাইন মৌসুমিকে সম্পাদক করা হয়। সালমা ইসলাম এমপি হওয়ায় দলে কোনো সময় দিতে পারেন না। কোনো কর্মসূচিও নেই সংগঠনটির। ঢাকার বাইরে কোনো কমিটি নেই। এ সময়ে কোনো কমিটি দিতে পারেননি। অফিস থাকলেও বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকে। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি : লিয়াকত হোসেন খোকাকে সভাপতি ও মোবারক হোসেন আজাদকে সম্পাদক করে বছরখানেক আগে এ কমিটি করা হয়। কিন্তু খোকা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পদের কথা অনেকটাই ভুলে গিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। এ পার্টির কোনো জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। মোবারক হোসেন আজাদসহ কয়েকজন পার্টি অফিসে মাঝেমধ্যে এলেও বাকিদের কোনো হদিস নেই। ফলে শুধু পার্টি অফিসকেন্দ্রিকই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। যে কটি জেলায় কমিটি রয়েছে সেগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ। জাতীয় কৃষক পার্টি : ৭৬ সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠনের কথা থাকলেও এ পার্টিরও অবস্থা অন্য দলগুলোর মতোই। সংগঠনের সভাপতি সাহিদুর রহমান টেপা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় শুধু কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। কিন্তু নিজ সংগঠনের খবরই নেই। সভাপতি নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। সারা দেশে সংগঠনটির বেহাল দশা। জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি : চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকারকে সভাপতি ও নাজমুল খানকে সম্পাদক করে এ পার্টির কমিটি ঘোষণা করার পর দুজনের কাউকেই আর দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায় না বলে জানান নেতা-কর্মীরা। এ পার্টিরও কোনো অফিস নেই, নেই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। জাতীয় শ্রমিক পার্টি : শাহ আলম তালুকদারকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর হোসেনকে সম্পাদক করে কমিটি করা হয় এ পার্টির। কিন্তু সভাপতি রেলওয়ের কর্মচারী আর সম্পাদক খুলনার খালিশপুরের ব্যবসায়িক কাজ নিয়েই ব্যস্ত। মাঝেমধ্যে কেন্দ্রের দু-একটি কর্মসূচিতে সভাপতিকে দেখা গেলেও সম্পাদককে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই চেনেন না। এ ছাড়া বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে আগের কমিটির সাবেক সভাপতি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করায় বর্তমান কমিটি চাইলেও কিছুই করতে পারছে বলে জানান সভাপতি। ফলে এ দলটিও কেবল নামকাওয়াস্তে। সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ সারা দেশে কাজ করছে। তবে জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টি, জাতীয় তাঁতী পার্টি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টি, জাতীয় সৈনিক পার্টি, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা সারা দেশে অনেকটা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, গঠনমূলক সমালোচনা তুলে ধরে জাতীয় পার্টিকে বাঁচান। পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টি যে ভোট পেয়েছে তাতেই বোঝা যায় সারা দেশে দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি কত দুর্বল। তিনি বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্য মহানগরগুলোয় পার্টিকে পুনর্গঠিত না করলে, রাজধানীতে পার্টির ভিত শক্ত করতে না পারলে দলকে বাঁচানো যাবে না।

সর্বশেষ খবর