শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

তীব্র গরম আর বিদ্যুৎ-পানি সংকটে জনজীবন দুর্বিষহ

দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে এখন মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সূর্যের প্রখর তাপে ক্লান্ত জনজীবন। গরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানি সংকট। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। আর ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্যবার লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে মানুষজনকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। গরমের কারণে বাড়ছে নানা ধরনের রোগবালাই। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ভ্যাপসা এ গরম আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। তারপর তাপপ্রবাহ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে আবহাওয়াবিদ সানাউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকায় সারা দেশে গরম অনুভূত হচ্ছে। এই গরম আগামী জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে বৃষ্টি কম হওয়ায় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকবে। বর্ষা মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত তাপপ্রবাহ তেমন একটা কমবে না।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, বর্তমানে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, মাইজদী কোর্ট, রাজশাহী, পাবনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ খুলনা ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে চার ডিগ্রি পর্যন্ত স্থানভেদে বেশি রয়েছে। এর ফলে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে এ তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, মুগদা, ধলপুর, সায়েদাবাদ, গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর, তাঁতীবাজার, রাজার দেউড়ি, শেখেরটেক, মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশন ও ইব্রাহিমপুরের বিভিন্ন জায়গায় পানি সংকটে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কিছু এলাকায় দিনভর পানি না পাওয়া গেলেও গভীর রাতে ওয়াসার সরবরাহকৃত লাইনে পানি আসছে। এ কারণে এসব এলাকার বাসিন্দারা পানির জন্য রাত জেগে থাকছেন। কিছু এলাকায় টানা কয়েক দিন পানি থাকে না। আবার কিছু এলাকায় দিনে মাত্র একবার পানি আসে। এ জন্য কোথাও কোথাও মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। নগরীর কিছু এলাকার পানি আবার এত দুর্গন্ধময় ও ময়লা যে, তা ব্যবহারের অনুপযোগী। ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের কার্যক্ষমতা কমে গেছে। আর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়। তবে ওয়াসা গণমুখী ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষকে ট্যাপের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা যায়। এরই মধ্যে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন পাইপ লাগিয়ে ঢাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বদলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহারের ৭০ ভাগ পর্যন্ত বাড়াতে কাজ করা হচ্ছে। গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং যন্ত্রণাও। রাজধানীসহ সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় দিনের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। সেখানে পল্লী বিদ্যুতের ত্রুটিপূর্ণ বিতরণ ব্যবস্থার কারণে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গরমে শিক্ষার্থী ও রোগীদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দিনে দফায় দফায় লোডশেডিং হলেও ঢাকার বাইরে টানা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গরমে লোড বেশি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে লোডশেডিং সমস্যা বৃদ্ধি পায়। রাজধানীতে বিকল্প ব্যবস্থায় জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হলেও এত লোড নিতে গিয়ে জেনারেটর বিকল হয়ে পড়ছে। ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা সোবহান শিকদার বলেন, গরমে তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানি সংকট। গরমের কারণে লোডশেডিংয়ের সময় ফ্রিজে থাকা মাছ-মাংস ও তরকারি নষ্ট হয়ে পড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র গরমের কারণে গত কয়েক দিনে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্তরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) ভর্তি হচ্ছেন। জানা যায়, ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। রোগীদের অধিকাংশের পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমি ও দুর্বল ভাব দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া তীব্র গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাস ও অফিস থেকে গরমে এসে ঠাণ্ডা-গরমে জ্বর, কাশি ও সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী নারী-পুরুষ। চিকিৎসকদের মতে, দূষিত পানি ও বাসি খাবার গ্রহণের কারণে গরমে মানুষের বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে। আর গরম বেড়ে যাওয়ায় তৃষ্ণার্ত পথিক ও শিশুরা রাস্তার পাশে তৈরি করা শরবত, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর পাশাপাশি হোটেল-রেস্তোরাঁয় পচা-বাসি খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর