শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন

ডলফিনের বিশাল অভয়াশ্রম এখন বাংলাদেশে

ডলফিনের বিশাল অভয়াশ্রম এখন বাংলাদেশে

বিরল ইরাবতীসহ সাত প্রজাতির প্রায় নয় হাজার ডলফিনের বিশাল অভয়াশ্রম এখন বাংলাদেশে। পাঁচ বছর আগেও বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় এ ডলফিনের আবাসস্থলের বিষয়টি অনেকের কাছেই ছিল অজানা। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রাণী-প্রকৃতি প্রেমী ও গবেষকদের কাছে ডলফিনের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত নাম এটি। শুধু ডলফিনের কারণেই প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক ইকো-ট্যুরিস্ট আসেন এখানে। জানা গেছে, বিশ্বঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নদীসহ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে রয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ ইরাবতী ডলফিন। আরও ছয় প্রজাতি হলো ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্প ব্যাক্ট, বটল নোস, ফিনলেজ, স্পিনার, স্পটেড ও গংগেজ রিভার ডলফিন। সমুদ্রের এ অংশে ব্রাইডস হোয়েল নামে অনন্য প্রজাতির এক তিমিরও আবাস।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহিরকুমার দে জানান, ২০০৯ সালের জুনের আগে ইরাবতী ডলফিন ছিল বিশ্বের বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়। ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি, এনওয়াই ও বাংলাদেশ সিটাসিন ডাইভারসিটি প্রজেক্টের দেশি-বিদেশি প্রাণী বিশেষজ্ঞরা পূর্ব সুন্দরবনসহ বঙ্গোপসাগরে ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। তারা ইরাবতী ছাড়াও ছয় প্রজাতির ডলফিন ও এক প্রজাতির তিমির সন্ধান পান। বিশ্ব থেকে হারিয়ে যেতে বসা ইরাবতীর সন্ধান বাংলাদেশে পাওয়ার ঘটনা তখন প্রাণিবিদদের মধ্যে তুমুল আলোচিত হয়। ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির 'বিলুপ্ত' প্রজাতির তালিকা থেকে ইরাবতী রাতারাতি উঠে আসে 'বিলুপ্তপ্রায়' তালিকায়। গবেষকরা বাংলাদেশের এই জলসীমার ১৩টি স্পটে ৪০টি হাম্প ব্যাক্ট ডলফিন পান। উপকূল থেকে ১১ মাইলে সুন্দরবনের মধ্যে এক হাজার ৩৮২টি ফিনলেস ও এক হাজার বটল নোস ডলফিনের সন্ধান মেলে। ১৪টি স্পটে পাওয়া যায় আড়াই শতাধিক স্পিনার ডলফিন। আট স্পটে ৮০০ স্পটেড ডলফিন ও ১৩টি স্পটে ২২৫টি গংগেজ রিভার ডলফিনের দেখা মেলে। ব্রাইডস হোয়েল পাওয়া যায় অন্তত ৫০টি। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে সুন্দরবনের এই এলাকার ৩১ দশমিক ৪ কিলোমিটার নদী ও শাখা নদীকে ডলফিনের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। ডলফিন বাঁচাতে এখানে ফাঁস জাল, কারেন্ট জাল, নেট জাল, বেন্দি জাল ও জাল দিয়ে রেণু পোনা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। সুইজারল্যান্ডের নাগরিক বব উইলসন বলেন, 'বিদেশি ইকো-ট্যুরিস্টদের এই ডলফিন দেখাতে দ্রুতগতির আধুনিক জলযান ও আরামদায়ক অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাহলে বাংলাদেশ প্রতি বছর এ খাত থেকে বিপুল অর্থ আয় করতে পারবে।' সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, 'দেশে হাজারো নেতিবাচক খবর রয়েছে, যা বিদেশে আমাদের ইমেজ নষ্ট করছে। এত কিছুর পরও সুন্দরবনের ডলফিন দেখে বিদেশি ইকো-ট্যুরিস্টরা বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তবে এই ডলফিন রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

অভয়াশ্রমের বুক চিরে পূর্ব সুন্দরবনের শ্যালা ও ভোলা নদী দিয়ে প্রতিদিন অনেক লাইটারেজ জাহাজ চলে। দুই মাসের মধ্যে তেল, সার, কয়লা ও ক্লিঙ্কারবাহী চারটি জাহাজ ডুবেছে। এতে হুমকিতে পড়ে ডলফিনসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। অয়েল ট্যাঙ্কার ডুবির পর সুন্দরবন বাঁচাতে ছুটে আসতে হয় জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলকে। সরকারকে অবশ্যই বড় পদক্ষেপ নিতে হবে।' পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, 'ডলফিন দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটক আগমন বাড়ছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। শুধু পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ পর্যটন খাত থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। গত মৌসুমে এখানে পর্যটকের সংখ্যা ছিল দুই লাখেরও বেশি। এ বছর তা আরও বাড়বে।'

 

সর্বশেষ খবর