শিরোনাম
শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঢাবিতে গোলটেবিল আলোচনা

মূল্যবোধের অবক্ষয়ে অপরাধ বৃদ্ধি

সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের এক সদস্যের হাতে অন্য সদস্য খুন, অভিনব কৌশলে ব্যাংক ডাকাতি, সমুদ্রপথে মানব পাচারসহ নানা ধরনের অপরাধ সমাজে তীব্র আকার ধারণ করেছে। মানুষের মাঝে নৈতিকতা এবং সামাজিক মূল্যবোধের ভাঙনের ফলে এসব অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশ্লেষক, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন।
ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমানের সভাপতিত্বে এতে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক সাদেকা হালিম, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কমোডর এম সাইফ, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) কাউন্টার ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তৌহিদুল ইসলাম, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান কার্জন, শান্তনু মজুমদার, অনুরাগ চাকমা, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, একাত্তর টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ। নুরুল হুদা বলেন, ‘দেশে কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই আমরা এফবিআইসহ নানা বিদেশি গোয়েন্দাকে ডাকি। এটি দেশের জন্য অনেক বড় লজ্জাজনক। আমাদের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রযুক্তিগত সামর্থ্য বৃদ্ধি না করে আমরা শুধু তাদের সমালোচনা করি।’ সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রথম বিশ্বের মতো পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক এবং নৈতিক মূল্যবোধের অধঃপতনের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া দ্রুত বিত্তবান হওয়ার যে প্রতিযোগিতা মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তার ফলেও অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারাগারে থাকা বেশির ভাগই হচ্ছে মাদক অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমরা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য মানসিক চিকিৎসা, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকি।’
অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘অপরাধ দমনের জন্য আইন করা হলেও আমাদের দেশে অনেক আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে নারী ও শিশু আইনের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। পুলিশকে অপরাধ দমনে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হলে পুলিশ অ্যাক্টের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।’ কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘আমরা জাতি হিসেবে অনেক লোভী। তাড়াতাড়ি বিত্তবান হওয়ার প্রতিযোগিতা এবং লোভের কারণে অপরাধের মাত্রা বাড়তেই আছে। নানা সময়ে র‌্যাবকে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। কিন্তু অপরাধ দমনে র‌্যাবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের কারণেই হল-মার্কের টাকা উদ্ধার, রানাকে গ্রেফতারসহ হেফাজতের তাণ্ডব মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে। র‌্যাব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করে এমন সমালোচনা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু আমাদের যতটা না ভুল তার চেয়ে বেশি সমালোচনা করা হয়।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার একটি পলিটিক্যাল দিক রয়েছে। আমাদের দেখতে হবে এই ব্লগার হত্যার বেনিফিশিয়ারি কারা।’ তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন করলে ৫০% সাইবার ক্রাইম রোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কারে বিশ্বাসী এবং আমরা যে কোনো গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই।’ অপরাধ রোধকল্পে তিনি বিচারব্যবস্থা সংশোধন করার জন্য বলেন।
কমোডর এম সাইফ মানব পাচার সম্পর্কে বলেন, বৈধ অবৈধ পথে মানব অভিবাসন হবেই। এটা প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। শিগগিরই মানব পাচার স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে। ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘ক্রসফায়ার করে অপরাধ কমানো যাবে না। এর জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই।’

সর্বশেষ খবর