মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা
সংস্কৃতি

নাচে গানে বর্ষাবরণ

নাচে গানে বর্ষাবরণ

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে, ওরে আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’- বিশ্বকবির এই অমোঘ বাণীর মতো প্রকৃতিতে এসেছে বর্ষা। একে বরণও করা হয়েছে নাচ, গান, শাস্ত্রীয় সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, গীতি আলেখ্য, বর্ষাকথন এবং বনজ-ফলদ বৃক্ষ বিতরণের মধ্য দিয়ে। গতকাল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এ আয়োজন করে।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী : সবুজ বাঁচানোর আহ্বানে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে বর্ষা উৎসব পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় সংগঠনের ঢাকা মহানগর সংসদের আয়োজনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানমালার শুরুতেই ছিল শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপের কণ্ঠে শাস্ত্রীয় সংগীত পরিবেশনা। মিয়া কি মল্লার রাগে তার অসাধারণ পরিবেশনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন শ্রোতারা। প্রিয়াঙ্কা গোপের পর দলীয় সংগীত পরিবেশন করে পঞ্চভাস্কর। তারা পরিবেশন করে, ‘রিমঝিম ঘন ঘন রে বরষে’ এবং ‘অম্বরে মেঘ মৃদঙ্গ বাজে’ গান। এরপর ছিল সালমা আকবর ও মাহমুদ সেলিমের পরিবেশনায় একক সংগীত। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরাট কণ্ঠের আবৃত্তি শোনার পর বর্ষার আবাহনে যোগ দিয়ে বিশেষ গীতি আলেখ্য পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। এ গীতি আলেখ্যের মূল ভাবনা ছিল, ‘সবুজ বাঁচাই, সবুজে বাঁচি’। উৎসবে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা এবং ওস্তাদ মমতাজ আলী খান সংগীত একাডেমির শিল্পীরা। একক সংগীত পরিবেশন করেন সাজেদ আকবর, ছায়া কর্মকার, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, মহাদেব ঘোষ, সোহানা আহমেদ প্রমুখ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন এবং ঝর্ণা সরকার। সাংস্কৃতিক পর্ব চলার একপর্যায়ে আয়োজন করা হয় বর্ষাকথন। এতে অংশ নেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানী, পরিবেশবিদ দ্বীজেন শর্মা, কৃষিবিদ ও উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা এবং উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। বর্ষাকথন শুরুর পর পরই আকাশ কালো করে প্রবল বেগে বৃষ্টি নামে অনুষ্ঠানস্থলে। বৃষ্টিতে ভিজেই বর্ষাকথন শেষ করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।
সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী : সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে গতকাল চারুকলার বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী বর্ষাবরণ। সকাল ৭টা থেকে ৯টা এবং দ্বিতীয় পর্ব বিকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল ৭টায় শেখ আবু জাফরের বাঁশি এবং দিলীপ শীলের দোতারা বাদনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা ঘটে। এরপর দলীয়ভাবে ‘বর্ষা ঋতু এলো এলো ওই’ গানটি পরিবেশন করে সুর সপ্তকের শিল্পীরা। সকালের পর্বে একক সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব ঘোষ, সালমা আকবর, আবু বকর সিদ্দিক, ইফফাত আরা নার্গিস, তানভীর হায়দার সজিব। এরপর আবারও দলীয় সংগীত পরিবেশন করে পঞ্চভাস্কর, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী, ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সংগীত একাডেমি। ‘মেঘের পালক চাঁদের নোলক, রুমুঝুমু কে বাজায়, মন মোর মেঘেরও সঙ্গী, পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ ইত্যাদি গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন, নৃত্যম, নটরাজ, নৃত্যাক্ষ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন লায়লা আফরোজ, রফিকুল ইসলাম ও নির্মলেন্দু গুণ। বর্ষাকথন পর্বে অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট, সভাপতি ড. হায়াৎ মামুদ। বিকালের পর্বে দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন ধ্রুব শিশু-কিশোর সংগঠন, কল্পরেখা, উদয়ন স্কুল, স্ব-ভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, বাঁশুরিয়া ও সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্বাধীনতা একাডেমি ও নৃত্যজন।
একক সংগীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, সরদার রহমত উল্লাহ, সজল, তানজিলা তমা, আনজুমান ফেরদৌস কাকলী, নারায়ণ চন্দ্র শীল, সঞ্জয় কবিরাজ, তানভীর আহমেদ, ফাতিমা কেকা, ঐশ্বর্য সমাদ্দার, এস এম মেজবা, রতনা সরকার, শ্রাবণী গুহ রায়, বিপাশা, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, আরিফ রহমান, সমর বড়ুয়া, খগেন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিমুল মুস্তাফা, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মজুমদার জুয়েল, রেজীনা ওয়ালী লীনা, নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলী, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান ও আজিজুল বাশার মাসুম।

সর্বশেষ খবর