মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা

এমপি পিনু খানের সেই প্রাডো গাড়ি জব্দ

‘গুলি চালানো হয়েছিল রনির পিস্তল দিয়েই’

এমপি পিনু খানের সেই প্রাডো গাড়ি জব্দ

কারা হাসপাতালে শুয়ে বসে বেশ আরাম-আয়েশেই দিন কাটাচ্ছেন এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনি। খাচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন আর ঘুমাচ্ছেন।
মগবাজারে জোড়া খুনের আসামি রনি ক্ষমতাসীন দলের এমপির পুত্র হওয়ায় তাকে কারা হাসপাতালে রেখে অলিখিতভাবে ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিলেও এমপির হস্তক্ষেপে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। অসুস্থতার অজুহাতে রনিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জোড়া খুনের আসামি রনির মা মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসন-২৩ এর এমপি পিনু খান। তিনি প্রভাব খাটিয়ে জোড়া খুনের এই মামলাটি প্রথম থেকেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যে কারণে পুলিশ রনিকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারেনি।   একই কারণে অসুস্থ না হয়েও তাকে রাখা হয়েছে কারা হাসপাতালে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র সুপার ফরমান আলী জানান, পুলিশ রিমান্ড শেষে গত ১৩ জুন রনিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় সেই দিনই তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। তবে কারাগারের অপর একটি সূত্র জানায়, রনি একজন মাদকাসক্ত। বিভিন্ন ধরনের নেশা গ্রহণ করতেন। নেশা না পেয়ে তার শরীরে কাঁপুনি ও খিঁচুনির সৃষ্টি হচ্ছে। ‘ব্যাড়া’ (নেশা গ্রহণের জন্য অস্থিরতা) ওঠায় তার হাত-পা ম্যাসাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেশা না পেয়ে যে উপসর্গ তার শরীরে দেখা দিচ্ছে, তার কারণে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে রনির মা এমপি পিনু খানের প্রাডো গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ। গত রবিবার রাতে গাড়িটি জব্দ করা হয়। প্রায় দুই মাস আগে ‘নেশাগ্রস্ত’ অবস্থায় রনি কালো রঙের ওই প্রাডো গাড়ি থেকে গুলি চালিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক দীপক কুমার দাস বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে গত রবিবার বিকালে এমপি পিনু খানের ন্যাম ভবনের বাসার গ্যারেজ থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল রাত ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে গুলিতে এক অটোরিকশা চালক এবং এক রিকশাচালক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহত রিকশাচালক আবদুল হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ঘটনার দুই দিন পর থানায় যে মামলা করেন, তাতে বলা হয়, একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে এলোপাতাড়ি গুলি  ছোড়া হলে তার ছেলে ও অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী মারা যান। পরে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সাদা মাইক্রোবাস নয়, সেটি ছিল কালো রঙের একটি প্রাডো গাড়ি এবং ওই গাড়িতে পিনু খানের ছেলে রনিসহ কয়েকজন ছিলেন। তদন্তে রনির সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর গত ৩১ মে তাকে এবং তার গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ঘটনার দিন রনি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে গুলিবর্ষণ করেন বলে তার গাড়িচালক ইমরানও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু চার দিনের রিমান্ডে নিলেও রনিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। পরে আদালতে আবারও রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস আদালতে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলেন, বখতিয়ারের বিরুদ্ধে জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি ও তার গাড়িচালক দুজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছেন। বখতিয়ার অসুস্থতার ভান করে কালক্ষেপণ করেছেন। হাসপাতালে পরীক্ষা করে তার কোনো রোগ পাওয়া যায়নি। তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় জামিনে মুক্ত হলে মামলার বাদী ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে পারেন। পরে আদালতের নির্দেশে রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নেয় পুলিশ। তখনো অসুস্থতার ভান করেন রনি। অবশেষে গত ১৩ জুন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলাম গতকাল জানান, রনির জব্দ করা পিস্তল দিয়েই গুলি চালানো হয়েছিল। তদন্তে এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর