বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

হাঁটুপানিতে কেনাকাটা

হাঁটুপানিতে কেনাকাটা

বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত রাজধানীবাসী। কেনাকাটার সময় ফুরিয়ে আসায় যানজট, জলাবদ্ধতার বাধা পেরিয়ে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরছেন সবাই। শেষ সময়ে এসে কেনাকাটা করতে রাজধানীর মার্কেটগুলোয় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্রেতারা গেছেন মার্কেটে। শেষ সময়ের কেনাকাটায় প্রাধান্য পেয়েছে সাজগোজের পণ্য। বিশেষ করে জুতা, গহনা, প্রসাধনী, ব্যাগ কিনতে ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ ছিল। এদিকে বৃষ্টির কারণে রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিবাগ, রাজারবাগ, মিরপুর, নিউমার্কেট, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে ছুটির দিনের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কিছুটা স্বস্তি ছিল পান্থপথ এলাকায়। পান্থপথে কোনো জলাবদ্ধতা বা যানজট না থাকায় হাজার হাজার ক্রেতা ভিড় করেছেন বসুন্ধরা শপিং মলে। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই মার্কেটে ঈদের শেষ সময়ের কেনাকাটায় বিক্রেতা-ক্রেতার সবারই ব্যস্ততা, এতটুকু সময় কারও হাতে নেই। গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। অনেকেই ছুটির দিনে কেনাকাটা করবেন বলে আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি তাদের পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করে। পুরো রাজধানী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। রাজধানীর অন্যতম মার্কেট নিউমার্কেট, গাউছিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতায় রাস্তা ডুবে যায়। মৌচাক মার্কেটের সামনে তীব্র যানজটের কারণে সবাই ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তবে ক্রেতারা স্বস্তি পেয়েছেন পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে গিয়ে। ওই এলাকায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে যাওয়ার পর যানজট, জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত এখন বেচাকেনা চলছে। বর্তমানে ক্রেতার চাপ এতই বেশি যে, বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১, ২ ও ৮ নম্বর লেভেলের দোকানগুলোয় জায়গা পাওয়া যায় না। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে গিয়ে দেখা গেছে, কেনাকাটার শেষ সময়ে এসে ক্রেতারা ভিড় করছেন বিভিন্ন সাজগোজের পণ্যের দোকানে। প্রথম পছন্দের পণ্য বিভিন্ন ধরনের পোশাক আগেই কিনে ফেলেছেন। এখন জুতা, গহনা, প্রসাধনী, ব্যাগের দোকানে সবাই ভিড় করছেন। জুতা কেনায় পছন্দে তালিকায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে যাচ্ছেন সবাই। দেশি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বিদেশি ব্র্যান্ডও অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। ব্র্যান্ডের দোকানের সঙ্গে স্থানীয় দোকানগুলোয়ও ক্রেতার রুচির কথা মাথায় রেখে আনা হয়েছে রংবেরঙের জুতা। গতকাল ‘বে এম্পোরিয়াম’, ‘হাস পাপি’সহ ব্র্যান্ডের জুতার দোকান ছাড়াও অন্য জুতার দোকানে ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে মেয়েদের ও বাচ্চাদের ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা মূল্যের স্যান্ডেল, জুতা, শু বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে মার্কেটের দোকানিরা জানিয়েছেন। গহনার দোকানগুলোয় ভিড় ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি। হাতের চুড়ি, আংটি, চেইন, দুলসহ বিভিন্ন গহনা কিনতে ক্রেতা ভিড় করেছেন বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে। তবে ইমিটেশন গহনা কেনায় ক্রেতাদের বেশি আগ্রহ ছিল। এসব দোকানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর দোকানগুলোয় মেহেদি কেনার হিড়িক। দোকানিরা জানান, এবার দেশীয় কেম্পানির মেহেদির পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানির মেহেদির কদর বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাকিস্তানি ‘কোন মেহেদি’। এ ছাড়া নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আলমাসের কদরও বেশ। সেই সঙ্গে আছে দেশি-বিদেশি গ্লিটার বা জরি মেহেদি। তবে দাম বিবেচনায় গড়পড়তায় দেশীয় কোম্পানির মেহেদিগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এবার মেহেদির রঙেও এসেছে বৈচিত্র্য। মেহেদি বলতে কেবল মেহেদি নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাহারি রং। আধুনিক ফ্যাশন ও সাজগোজের অংশ হিসেবে লাল নীল সবুজ রঙেরও মেহেদি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ঈদের পোশাকের সঙ্গে রং মানিয়ে জুতা, প্রসাধনী, গহনা কিনে হাতের ভ্যানিটি ব্যাগও কিনতে দোকানে দোকানে ঘুরেছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল ব্যাগ বিক্রির পরিমাণ অনেক ছিল বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। বসুন্ধরা সিটির ‘রঙ’, ‘অঞ্জনস’, ‘সাদাকালো’, ‘দেশাল’ ও ‘নিপুণ’ ইত্যাদি দোকানে পোশাকের পাশাপাশি ঘর সাজানোর দ্রব্য ও গহনা, ব্যাগ ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী ক্রেতাদের এ পণ্যগুলোও কিনতে দেখা যায়। একই তলায় ‘ইনফিনিটি’ নামক মেগা শপে জামা-জুতা ছাড়াও ব্যাগ, প্রসাধনী সামগ্রীর বিশাল সংগ্রহ। ঈদ সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতারা এখন এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের দোকান মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে এবার এ মার্কেটের ১৪০০ দোকানের প্রতিটিতে গড়ে ১০ লাখ টাকার নতুন পণ্য আনা হয়েছে। সে হিসেবে গড়ে দোকানিরা প্রায় ১৪০ কোটি টাকার পণ্য তুলেছেন। প্রতিটি দোকানে ঈদে গড়ে ২০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়। এ শপিং মলের দোকান মালিক সমিতি এবার ঈদে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির লক্ষ্য নিয়েছে। তারা আশা করছে এ লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে। এদিকে প্রতিবারের মতো এ ঈদেও এ শপিং মলে মাত্র ২০০ টাকার কেনাকাটায় ক্রেতাকে কুপন দেওয়া হচ্ছে। র‌্যাফেল ড্রতে এবার প্রথম পুরস্কার হিসেবে থাকছে ১৫০০ সিসির একটি ব্র্যান্ড নিউ টয়োটা কার। এ ছাড়াও থাকছে সোনা ও হীরার গহনা, মোটরসাইকেল, বিদেশ ভ্রমণের টিকিট ও ১১টি মেগা পুরস্কারসহ মোট ১০৯টি পুরস্কার। কেনাকাটা করতে গিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ভিতরে ক্রেতাদের পড়তে হয়েছে নোংরা হাঁটুপানিতে। ক্রেতা যারা আসছেন হাঁটুপানিতে নেমেই করছেন কেনাকাটা। তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে এ মার্কেটে অনেকেই কেনাকাটা সেরেছেন সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে পানিতে ভিজে। বৃষ্টিতে পানি উঠেছে আশপাশের মার্কেটগুলোতেও। বাদ যায়নি নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনিচক কোনোটাই। নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে রাস্তায় ও মার্কেটের ভিতরে বেশ কিছুটা জায়গায় গতকাল জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। একই রকম জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে পাশের গাউছিয়া মার্কেটের কিছু অংশেও। দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকায় এ মার্কেটের উত্তর দিকে রাস্তার পাশের দোকানদাররা দোকান খুলতে পারেননি। ময়লা পানি মাড়িয়ে রাস্তা চলাচল করতে হয়েছে মানুষকে। অনেকে দোকানের সামনে পানিতে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা সারছেন।

সর্বশেষ খবর