বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগের সম্মেলন

কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। আর সেই সঙ্গে দলের নেতা-কর্মী ও সংশ্লিষ্ট সবার কেবল একটাই কৌতূহল- কে হচ্ছেন নতুন সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক। আগামী ২৫-২৬ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে। এরই মধ্যে গতকাল শীর্ষ নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের সময়সীমা শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দেড় শতাধিক পদপ্রত্যাশী নেতা। যদিও সেখান থেকে সম্ভাবনার তালিকায় মূলত ডজনখানেক নেতার নামই শোনা যাচ্ছে বেশি। কিন্তু দলের মধ্যে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে নির্বাচন নাকি মনোনয়নের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না। তবে সংগঠনের একাধিক নেতা জানিয়েছেন,  সিন্ডিকেট মুক্ত করতে এবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই শীর্ষ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করতে পারেন। বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে সারা দেশে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমালোচিত হয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন তোলে বিভিন্ন মহল। আর সে কারণেই এবারের সম্মেলনকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করছেন সবাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নতুন নেতৃত্বের বিষয়টিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও বিষয়টি দেখভাল করছেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার সম্মেলনে চমক থাকছে। ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি উদ্ধারে বিগত দিনে যারা সৎ, মেধাবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে তারাই নেতৃত্বে উঠে আসবে। অভিজ্ঞ হলেও সমালোচিত কোনো নেতাকেই জায়গা দেওয়া হবে না। আর সেক্ষেত্রে নতুন মুখও আসতে পারে। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতারাও এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গৌরবের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও মানুষ ছাত্রলীগের সমালোচনা করে। কারণ আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা অনেক। আর এ কারণেই আমরা সমালোচনা নিয়ে চিন্তিত নই। বরং সেই প্রত্যাশা পূরণের জন্যই কাজ করতে চাই। এবার সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে তারাই উঠে আসবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। একই সঙ্গে যারা বিএনপি কিংবা জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা ও আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজপথে সক্রিয় ছিল তারাই ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দেবে। এদিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলন ঘিরে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতার সিন্ডিকেট। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক লিয়াকত শিকদারের নেতৃত্বে একটি এবং অপর সিন্ডিকেটটি কাজ করছে ছাত্রলীগের আরেক সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন। দুই সিন্ডিকেট যদি ঐকমত্যে আসতে পারে তবেই সমঝোতার কমিটি হতে পারে। আর তা না হলে ভোটাভুটির মাধ্যমেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবে। এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে সম্ভাব্যদের তালিকায় যাদের নাম পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী এনায়েত, পরিবেশ সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক রানা, ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক ইমতিয়াজ বাপ্পী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল হক প্রিন্স, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম, উপ-আইন সম্পাদক বিপ্লব হাসান পলাশ প্রমুখ। এদিকে সম্মেলন দরজায় কড়া নাড়লেও এখনো দেশে ফেরেননি সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। কবে ফিরবেন তাও অনিশ্চিত। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উপস্থিত না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। তবে এবারের সম্মেলনের আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেন। এ জন্য অনেকেই মনে করছেন, এবার একটা চমক থাকতে পারে। এদিকে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের অনেকেই চাচ্ছেন ছাত্রলীগের আগামী নেতৃত্ব শেখ হাসিনার পছন্দে আসুক। তারা ভোটাভুটির বিপক্ষে। ছাত্রলীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ সময় হলেও বৃষ্টির কারণে সময় বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত করা হয়। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। সম্মেলন প্রথমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে চলতি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাকে নিয়ে সম্ভাব্য স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেছেন।

সর্বশেষ খবর