শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
মার্কিন আদালতের রায়

বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন নয়

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দলগতভাবে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয় মর্মে রায় দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের অঘোষিত তালিকায় বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন এবং দলগতভাবে বিএনপি কোনোভাবেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না-এমন একটি চ্যালেঞ্জের মুখে ৭ জুলাই মার্কিন ইমিগ্রেশন জজ ডরোথা হারবেক এক ঐতিহাসিক রায় দিয়ে বলেন, বিএনপি দলগতভাবে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। এ রায়ের ফলে বিএনপির কোনো কর্মী-সংগঠক হিসেবে অ্যাসাইলাম (যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে রাজনৈতিক আশ্রয়) প্রার্থীদের সামনে আর কোনো বাধা থাকল না। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা অ্যাটর্নি অশোক কর্মকারের করা এক মামলায় নিউজার্সির এলিজাবেথ সিটির ইমিগ্রেশন আদালতের বিজ্ঞ জজ ডরোথি হারবেক এ রায় দেন। খবর এনআরবি নিউজের।
সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ‘অঘোষিত একটি তালিকার অন্তর্ভুক্ত’ করে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়। আর এটি করা হয় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে। পেট্রল দিয়ে গাড়িতে আগুন, পুলিশ হত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলা ইত্যাদি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলগতভাবে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা  হয় সরকার ও এর সমর্থকদের পক্ষ থেকে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে বিএনপির জোট গঠনের বিষয়টি সন্ত্রাসী অপবাদের ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তবে নিউইয়র্কের খ্যাতনামা অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার তার এক মক্কেলের জন্যে ইমিগ্রেশন আদালতে লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ‘বিএনপি যে একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন’ এবং ‘দলগতভাবে বিএনপিকে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন নয়’ সে ব্যাপারে বিস্তারিত যুক্তি প্রদর্শন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিউজার্সির এলিজাবেথ সিটিতে অবস্থিত ইমিগ্রেশন আদালতের বিজ্ঞ জজ ডরোথি হারবেক এক নির্দেশে বাদীকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা থেকে বিরত করা যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন। বিজ্ঞ আদালত মনে করছেন, বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করা যাবে না এবং এর সমর্থকদের যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনায় অযোগ্য মনে করা ঠিক হবে না। ইমিগ্রেশন জজের এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির সমর্থক হিসেবে যাদের অ্যাসাইলামের আবেদন ঝুলে আছে তারা বড় একটি ধাক্কা থেকে রক্ষা পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অ্যাসাইলাম মঞ্জুর করা বা না করা সবটাই নির্ভর করে ইমিগ্রেশন জজের মর্জির ওপর। যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক ‘ঠিকানা’য় গতকাল শীর্ষ সংবাদ হিসেবে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। ‘যুক্তরাষ্ট্রের কোর্টের ঐতিহাসিক রায় : বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন নয়’ শীর্ষক এ সংবাদে রায়ের খুঁটিনাটি উল্লেখ করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ রায় প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি কর্মকার বলেন, ‘বিএনপির কোনো কোনো কর্মী বা নেতার কার্যক্রমে মনে হতে পারে যে তিনি বা তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছেন। তবে তাই বলে দলগতভাবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি বিরোধী দলকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেওয়া ন্যায়সংগত নয় বলে আমি আইনগত যুক্তি উপস্থাপন করেছি।’ তিনি বলেন, এই ঈদেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনকে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। বিএনপি যদি সন্ত্রাসী সংগঠন হয়, তাহলে এটি কীভাবে সম্ভব!
মামলার বিবরণে প্রকাশ, গত বছরের ১০ অক্টোবর ২৫ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার সময় সীমান্তরক্ষীদের কাছে ধরা পড়েন। পরের মাসের ৩ তারিখে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে জানায়, তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে। ডিসেম্বরের ৩ তারিখে ওই বাংলাদেশি তখন অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করেন এবং বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তাকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া স্থগিতের আবেদন জানান। বিএনপির সদস্য হিসেবে তিনি অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করেন। এ বছরের ২ মার্চ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে আদালতকে জানায়, অ্যাসাইলাম প্রার্থনার কোনো অধিকার তার নেই। কারণ বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। এ ছাড়া এ দলের সমর্থকরা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। তবে অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার তার যুক্তিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা হচ্ছে যারাই বিরোধী দলে থাকেন তারা সংসদে না গিয়ে রাজপথে নামেন এবং সরকারকে যে কোনোভাবে টেনে নামানোর চেষ্টা করেন।

সর্বশেষ খবর