মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে লিয়াকত সিকদার

সিন্ডিকেট শব্দের সঙ্গে আমি পরিচিত নই

সিন্ডিকেট শব্দের সঙ্গে আমি পরিচিত নই

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার বলেছেন, সিন্ডিকেট বলতে কোনো শব্দের সঙ্গে আমি পরিচিত নই। এ ছাড়া ছাত্রলীগে কোনো সিন্ডিকেটও নেই। সংগঠনের নেতা-কর্মী-কাউন্সিলররাই প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে দুর্বল করতে এবং ছাত্রলীগকে ঘায়েল করতেই এ মিথ্যা-কাল্পনিক অপপ্রচার করা হয়। গতকাল বিকালে সেগুনবাগিচার ভাড়া বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। ছাত্রলীগের ২৮তম কাউন্সিল ঘিরে বিশেষ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে সাবেক এই সভাপতির বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের মুখোমুখি হন ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা। ছাত্রলীগের ২৮তম কাউন্সিলে ঘুরেফিরে বিশেষ সিন্ডিকেটের গডফাদার হিসেবে আপনার নাম আলোচনায় এসেছে- এমন প্রশ্নে লিয়াকত সিকদার বলেন, কীসের সিন্ডিকেট? কার সিন্ডিকেট? কেউ কি বিনা ভোটে নেতা বানিয়ে দিয়েছে? সিন্ডিকেট আছে প্রমাণ করতে কত লেখালেখি হলো, প্রমাণ করতে পারেনি কেউ। সারা দেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। ছাত্রলীগের কাউন্সিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, মেধাবী, নিয়মিত শিক্ষার্থী, সৎ, ত্যাগী এবং দক্ষ তারাই নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে নেতা হয়েছেন। যদি সিন্ডিকেটই থাকত তাহলে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হতে পারত না। তার (সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন) পক্ষে কথা বলার জন্য বা সুপারিশ করার মতো সিলেট অঞ্চল থেকে কোনো বড় নেতা ছিলেন না। সারা দেশ থেকে আগত কাউন্সিলররা তাকে যোগ্য মনে করেছে বলেই ভোট দিয়ে আগামী দুই বছরের জন্য তাদের নেতা নির্বাচিত করেছে। নাম উল্লেখ না করলেও গণমাধ্যমের কর্মীদের সমালোচনা করে লিয়াকত সিকদার বলেন, একটি বিশেষ পেশায় নিয়োজিত যারা অতীতে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা শেখ হাসিনার হাতকে দুর্বল করার জন্য জামায়াত-তারেক রহমানের এজেন্ডা নিয়ে ছাত্রলীগকে ঘায়েল করতে চাইছেন। তাই তারা ‘সিন্ডিকেট’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কারণ তারা ভালো করে জানেন, ছাত্রলীগকে ঘায়েল করতে পারলে শেখ হাসিনার হাতকে দুর্বল করা যাবে। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনাদের চেষ্টা সফল হবে না। কারণ ছাত্রলীগ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ছাত্রলীগের অবদান। সেই অবদানকে খাটো করার অপপ্রয়াস সফল হবে না।
দলের একটি অংশও আপনার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগ করে- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক লিয়াকত সিকদার বলেন, একদল লোক আছেন, যারা আওয়ামী লীগের যে কোনো দুঃসময়ে মাঠে থাকেন না। এসব নেতা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আঁতাতের রাজনীতি করেন। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে মাঠে ছিলেন না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে গাঢাকা দিয়েছিলেন। হেফাজত যেদিন ঢাকায় অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ অফিস আক্রমণ করে সেদিন দলীয় কার্যালয়ে পা রাখেননি এবং সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দেখা যায়নি তারাই এসব অভিযোগ করেন। এদের কাউকে ১৫ আগস্ট জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনও করতে দেখিনি। আবার ছাত্রলীগের কোনো কর্মী বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় থাকলে তাদের খোঁজখবর রাখেন না। কিছু কিছু মিডিয়া সঠিক তথ্য জেনে বা না জেনে এই সুযোগে বিভ্রান্তি ছড়ায়। সংগঠনের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে বর্তমান ছাত্রলীগকে সৎ পরামর্শ প্রদান করা, সার্বিক সহযোগিতা করা আমার কাছে নৈতিক দায়িত্ব। যে কোনো বিপদে পাশে দাঁড়ানো, সাহস জোগানো যদি অপরাধ হয়ে যায় তাহলে সেই অপরাধ সারা জীবন করব। বর্তমান নেতৃত্ব কেমন পেলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে মোতাবেকই নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। নিয়মিত, মেধাবী, ক্লিন ইমেজের ছাত্ররাই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এসেছে। তারা আওয়ামী লীগের দুর্দিনে সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে এবং ক্যাম্পাসেই এদের পদচারণা ছিল। কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়নি। নীতি-আদর্শ বজায় রেখেই তারা রাজনীতি করেছে। এ নীতি-আদর্শ আগামীতেও বজায় রাখবে বলে বিশ্বাস করি। তুলনামূলক এ কমিটি নবীন, সারা দেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের চেয়েও বয়সে বড় অনেক নেতা আছেন, তাহলে তারা কি সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন? এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা যোগ্যতা থাকার পরও নেতৃত্বে আসতে পারছে না কেন- এমন প্রশ্নে লিয়াকত সিকদার বলেন, আজকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো সেশনজট নেই। এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে। সে কারণে আজকে ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স পাস করছে। মাস্টার্স পাস ছেলে কখনই অপরিপক্ব হতে পারে না। এরা বয়সে ছোট হলেও মেধা ও মানসিকতায় অনেক বড়। কাজেই সারা দেশে তারা সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। বিগত সময়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে খবরের কাগজে শিরোনাম হয়েছে। নতুন কমিটি কি সে কলঙ্ক মুছতে সক্ষম হবে- এমন প্রশ্নে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, বিগত দিনে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে বেশকিছু নেতিবাচক ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এটা যতটা না ছিল অর্থনৈতিক বা সহিংসতা, তার চেয়ে বেশি ছিল তুচ্ছ ঘটনা ও নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। তবে যখনই যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নতুন নেতৃত্বও আগামীতে সারা দেশে একটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। প্রত্যেক জেলা-উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সফর করতে হবে। তাদের সঙ্গে বসতে হবে। দিকনির্দেশনা দিতে হবে। বিগত সোহাগ-নাজমুলের কমিটি সারা দেশে কমিটি গঠন করেছে। নতুন কমিটিকে বলব, তারা যেন অতি স্বল্প সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে।

সর্বশেষ খবর