মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

হতাশায় সুনামগঞ্জের রাজনীতি

১৭ বছর কমিটি হয় না আওয়ামী লীগে

সুনামগঞ্জে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে সম্মেলন হয় না দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে। চলতি বছরের শুরুর দিকে সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করেও অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তা স্থগিত করা হয়। সম্মেলন ঘিরে বিবদমান একটি পক্ষের জোরালো তদবিরে হাইকমান্ড তা স্থগিত করতে বাধ্য হয় বলে প্রচারণা রয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
এদিকে দীর্ঘ বিরতির পর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে জেনে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছিল, স্থগিতের কারণে সেটি হতাশায় রূপ নিয়েছে। তিন বছরের কমিটি দিয়ে আর কত বছর দল চলবে- এমন উষ্মা প্রকাশ পাচ্ছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, দেড় যুগ ধরে কমিটি না হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেতৃত্বের বন্ধ্যত্ব দেখা দিয়েছে। নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা না থাকায় যারা পদপদবিতে রয়েছেন তাদের মধ্যে উদাসীনতা যেমন কাজ করছে, তেমনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে বের হয়ে আসা নেতারাও উপযুক্ত স্থান না পাওয়ায় বিস্তৃত হয়েছে হতাশা। এ কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে। বেড়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলীয় সূত্র জানায়, স্থগিত হওয়া সম্মেলন সামনে রেখে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফের চাঙা হয়ে উঠেছে গ্রুপিং। বর্তমান পদপদবিধারী নেতাদের বিপরীতে ফের সংগঠিত হয়েছেন সাবেক সুরঞ্জিত গ্রুপের অনেকে। আট বছর আগে বিলীন এই গ্রুপে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন অনেক নেতা-কর্মী। আলোচিত এই গ্রুপের নেতারা বর্তমান জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। ‘একতরফা উপজেলা-পৌর কমিটি গঠন করা হয়েছে’ এমন অভিযোগ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিত করার পেছনে এরাই কাজ করেছেন। পুরনো গ্রুপটিকে নতুন করে চাঙা কারার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত- এমন কানাঘুষা থাকলেও বিষয়টি স্বীকার করছেন না কেউ। জেলা কমিটির বর্তমান পদধারী নেতাদের বিকল্প হিসেবে ওই গ্রুপটি দাঁড় করানো হলেও তাদের কর্মকাণ্ড দলীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারবে না বলে দাবি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। সূত্র জানায়, নতুন গ্রুপে জেলার দুজন এমপির পাশাপাশি রয়েছেন জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন। সূত্র জানায়, স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর আসন্ন সম্মেলনে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেতে এক্কাট্টা হতে শুরু করেন বিলুপ্তপ্রায় সেন গ্রুপের নেতারা। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ থেকে তাদের সঙ্গে হাত মেলান জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন, যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট নান্টু রায়, প্রচার সম্পাদক হায়দার চৌধুরী লিটন, সদ্য সাবেক শ্রমিক লীগ সভাপতি সিরাজুর রহমান সিরাজ ও কৃষক লীগ সভাপতি করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল। নতুন বলয়ের ফ্রন্টলাইনে মতিউর-মুকুটবিরোধী দুই এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ছাড়াও যুক্ত হন জেলা পরিষদ প্রশাসক ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন এবং তার ভাই অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন।
সূত্র জানায়, স্থগিত হওয়া সম্মেলন সামনে রেখে নতুন একটি প্যানেলের খসড়া তৈরি করে নিয়েছেন নতুন গ্রুপবদ্ধ নেতারা।
সূত্রের দাবিমতে, মুহিবুর রহমান মানিক বা অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিনকে সভাপতি পদে রাখা হবে। খসড়া ওই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদে নাম রয়েছে ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, তার ভাই খায়রুল কবির রুমেন ও ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপির। অন্যদিকে বর্তমান পদধারীদের সঙ্গে অতীতে সাপে-নেউলে সম্পর্ক থাকলেও এখন ‘উষ্ণ’ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র আইয়ুব বখত জগলুলের- এমন প্রচারণা সবখানে।
সাধারণ সম্পাদক পদকে টার্গেট করে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছেন জেলার এই প্রভাবশালী নেতা। তবে দলীয় গ্রুপিং, পাল্টা গ্রুপিং সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না। অতীতে কেউ কেউ বাকশালে চলে গিয়েছিলেন। আমি সব সময় আওয়ামী লীগে আছি, থাকব।’ জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন বলেন, ‘সিনিয়র নেতাদের শ্রদ্ধা করে নতুন উদ্যমে রাজনীতি করতে চাইছি। জননেত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজš§কে মূল্যায়ন করছেন- এ কারণে অনেকের মধ্যে আমাকে নিয়ে স্পৃহা তৈরি হতে পারে। এটিকে অনেকেই মেরুকরণ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘পুরনো ও নতুন মিলে সুন্দর একটি আওয়ামী লীগ হোক এটিই আমার প্রত্যাশা।’ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘কেউ কেউ নিজেকে ওভার ইস্টিমিট করে। এটা যারা করে তারা খুব দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়।’ তার দাবি, ‘জেলা আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং নেই। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি।’ তিনি দাবি করেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে একাধিকবার নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সুবিধা করতে পারেননি। নেত্রীর সাফ কথা, এখানে আপনার কোনো ভূমিকা রাখার প্রয়োজন নেই, বিষয়টি আমি দেখব।’
জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা দেখছি না। সেন বাবুসহ আরও সাহেবরা আছেন। তারা কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না।’

সর্বশেষ খবর