মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

বিএনপিতে থেমে নেই গ্রুপিং

মামলা আর ধরপাকড়ে সুনামগঞ্জে বিএনপির দলীয় কর্মকাণ্ড স্থিমিত হয়ে পড়লেও থেমে নেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ফলে দলটি এখন ত্রিধাবিভক্ত। যে করেই হোক ঘরের ‘শত্রু’কে আগে বধ করতে হবে- বিবদমান পক্ষগুলোর নেতাদের এমন ‘আপসহীন’ মনোভাব নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ দলের তৃণমূল। পদ-পদবি ঘিরে বিএনপিতে এমন তুমুল দ্বন্দ্ব থাকায় প্রতিপক্ষকে কাবু করতে বেগ পেতে হচ্ছে না সরকার ও সরকারি দলের। দলীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সরকারি দল ও পুলিশের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনায় জ্যেষ্ঠ কয়েকজন বাদে আসামি হয়েছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী। জেল খেটেছেন তাদের অনেকে। জেলা সদর ছাড়াও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ছাতক, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও দিরাই উপজেলায়। অন্যদিকে কমিটি নিয়ে ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে গ্রুপিং মারামারির ঘটনায় করা চার মামলায় আসামি হয়েছেন আরও সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। ফলে মামলা আর গ্রুপিংয়ের বেড়াজালে পর্যুদস্ত এখন বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা। বিপুল জনসমর্থন থাকলেও সাংগঠনিক কর্মসূচিগুলোতে এখন আর কর্মীদের টানতে পারছেন না নেতারা। শহরের জনাকীর্ণ রাজপথ ছেড়ে ‘কোর্ট গেট টু পুরান বাসস্ট্যান্ড’ পর্যন্ত সীমিত হয়ে হয়ে পড়েছে নামকাওয়াস্তে বের করা মিছিল। পুলিশের মারমুখী আচরণ আর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে পুলিশের বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে কর্মসূচিগুলো পালন করতে বাধ্য হচ্ছে বিএনপি। প্রসঙ্গত, বিগত উপজেলা নির্বাচনে জেলার যে ১০ উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে সাতটিতে জয়ী হন বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটিতেও ছিল বিএনপির জয়জয়কার। তবে ওই নির্বাচনে ‘সবচেয়ে সম্ভাবনাময়’ তিনটি উপজেলার দলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে একাধিক প্রার্থী থাকায়। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীর দাবি, বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। বড় দলে ভিন্নমত থাকে। তবে তা সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের এপ্রিলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে ভেঙে দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপির কমিটি। কেন্দ্রীয় অফিসে ডাকা জেলার মিটিংয়ে ‘অভিমানে’ সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়া। এরপর আহ্বায়কের দায়িত্ব পড়ে সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরীর ওপর। এত বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও গতি বাড়াতে গিয়ে সেই যে দুর্গতিতে পড়ে বিএনপি, এখন তা সামাল দিতে পারছেন না দায়িত্বে আসীন নেতারা। জেলাজুড়ে বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মাত্রা এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। সাবেক সভাপতি আছপিয়া অনুসারীরা মেনে নিতে পারছেন না নাছিরের নেতৃত্ব। আর তাদের বাগেও আনতে পরছেন না আহ্বায়ক নাছির।
ফলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তুমুল গ্রুপিং চলছে বিএনপিতে। মারমুখী অবস্থান নিয়ে একে অন্যের পরাজয় দেখার অপেক্ষায় যেন বসে আছেন। এই দুটি গ্রুপের পাশাপাশি চার সাবেক ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে জেলা সদরে সক্রিয় রয়েছে অপর একটি গ্রুপ। তারা দলীয় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন আলাদা ব্যানারে। দলীয় এই গ্রুপিয়ের প্রভাবে অঙ্গ-সংগঠনগুলো হয়ে পড়েছে দ্বিধা আর ত্রিধাবিভক্ত। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়া বলেন, ব্যক্তিগত প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের কারণেই আজ এই গ্রুপিং। এর মধ্য দিয়েই রাজনীতি চলে। আন্দোলনের সময় এলে বোঝা যাবে এর মাত্রা কেমন। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোজা ও ঈদের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটা শিথিল ছিল। এখন সব ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন শুরু হবে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলকে চাঙ্গা ও কোন্দলমুক্ত করতে স্বয়ং খালেদা জিয়া কমিটি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি পক্ষ খালেদা জিয়ার নির্দেশই মানছে না। মিছিল-মিটিংয়ে আসছে না। তাদের নিয়ে আমরা মহাসংকটে আছি।’

সর্বশেষ খবর