শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ গ্যাস চান ব্যবসায়ীরা

মুখ্যসচিবের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক

ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছেন না দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। অথচ দিনের পর দিন সুদ গুনতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও গ্যাসের সংযোগ দিচ্ছে না। এ অভিযোগ করে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের কাছে শিল্প-কারখানায় অনুমোদিত চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত গ্যাস সংযোগের দাবি জানিয়েছেন। তারা ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়ে বলেছেন, দেশে কোনো জ্বালানি নীতিমালা না থাকলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না।
গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে ওই বৈঠক সূত্র জানায়, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ও দাবির জবাবে তাদের আশ্বাস দিয়ে মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্যাস তো নেই। দেব কোথা থেকে। গ্যাসের স্বল্পতা আছে। এর পর সংযোগ দিলেও গ্যাসের মূল্য যে পর্যায়ে আছে, সেখানে রাখা যাবে না। ব্যবসায়ীদের ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চিয়তা দিয়ে তিনি আরও বলেন, জ্বালানি নীতিমালায় ব্যবসায়ীরা কী চান এবং বিদ্যমান গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সমাজের ভাবনা কী, তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানানো হবে। পাশাপাশি চলমান সংকট উত্তরণে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশার কথা প্রধানমন্ত্রী ও তার জ্বালানি উপদেষ্টাকে অবহিত করা হবে বলেও মুখ্যসচিব ব্যবসায়ীদের জানান।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী নেতা রোকিয়া আফজাল রহমান ও তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, মীর নাসির হোসেন ও এ কে আজাদ, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, এফবিসিসিআইর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুব আলম, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মনজুর, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদ, রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, বিটিএমএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম প্রমুখ। বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশে গ্যাস শেষ হয়ে যাবে। তাই শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়ীদের বিকল্প জ্বালানির চিন্তা করতে হবে। এলএনজি এলে তা বেশি দামে কিনতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ চাই। সরকারের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ প্রস্তাবে মুখ্যসচিব রাজি হয়েছেন বলে তিনি জানান। মীর নাসির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা শিল্পে বিনিয়োগ করে বসে আছি। এ পর্যায়ে সরকার আমাদের বিপদে ফেলতে পারে না। তাই আমরা সরকারের কাছে জ্বালানি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চাই। যদিও দেশে এখন বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত আছে। কিন্তু আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। আমরা যদি মানসম্মত বিদ্যুৎ না পাই, তাহলে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ দিলে লাভ কী? এ কে আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেসব কারখানার অনুমোদিত চাহিদাপত্র আছে তাদের গ্যাস সংযোগ দিন। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত জ্বালানি নীতিমালা করুন। নইলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন আমরা গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছি না। অথচ ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে এখন বসে আছেন। সরকার যেসব শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে, সেখানে দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিন। শহিদুল্লাহ আজিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসায়ীরা শিল্প-কারখানা স্থাপন করে সরকারের ডিমান্ড নোট (চাহিদাপত্র) পাওয়ার পরও গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এখন ২৫৩টি কারখানা গ্যাসের সংযোগ পেলে প্রায় তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। এর আগে ২২ জুলাই এফবিসিসিআই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে দেশের অনেক শিল্প-কারখানা চালু হচ্ছে না। ওই সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছিলেন, আমরা এখন থেকে আর গ্যাসভিত্তিক শিল্প-কারখানা করব না। এখন বিদ্যুৎনির্ভর শিল্প হবে।
 তবে যেসব কারখানা ইতিমধ্যে গ্যাসভিত্তিক করা হয়েছে কিন্তু উৎপাদনে যেতে পারেনি, তাদের গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। তার দাবি- কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়ছে না। অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করছে। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণ উৎপাদনে যেতে পারছে না। ফলে বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থায়ন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিনিয়োগ উৎসাহ এবং চলমান উৎপাদন প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর