মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

এবার বেসরকারিভাবে শ্রমিক পাঠানো হবে মালয়েশিয়ায়

কাঠামো নির্ধারণে প্রতিনিধি দলের সফর কাল থেকে

দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সরকারি মাধ্যম বা জি-টু-জি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক প্রেরণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু তিন বছরে মাত্র ৯ হাজার শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হয়েছে। তাই আবার বেসরকারি এজেন্টদের শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। চালু হতে যাচ্ছে বিজনেস টু বিজনেস বা বি-টু-বি পদ্ধতি। এসব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ও নতুন কাঠমো নির্ধারণে আগামী বুধবার তিন দিনের সফরে আসছে মালয়েশীয় প্রতিনিধি দল। তারা সফর করে ফিরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরই দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি এজেন্টদের
সম্পৃক্ত করার পর শৃঙ্খলা রক্ষাই হবে চ্যালেঞ্জ। আগের মতো প্রতারণার মহোৎসব শুরু হলে ফের সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ওয়াহাব বিন মোহাম্মদ ইয়াসিনের নেতৃত্বে ২৯ থেকে ৩১ জুলাই ঢাকা সফর করবেন সে দেশের প্রতিনিধিরা। এ দলে আরও থাকছেন মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক মুস্তাফা বিন ইব্রাহিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি জুলকিফি ইয়াকব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশন বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি শাহরিল বিন ইসমাইল ও বৈদেশিক শ্রমিক বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি মোহাম্মদ জামির বিন মাত জাইন। ঢাকায় তিন দিনের সফরে তারা বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী-সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানির নতুন কাঠামো তৈরি হবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সদ্য সাবেক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররাফ হোসেনের গত মাসে মালয়েশিয়া সফরে সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারেই ঢাকা সফরে আসছেন দেশটির প্রতিনিধিরা। ওই বৈঠকে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক নেওয়া হবে। কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক। জি-টু-জি পদ্ধতিতে যেমন শুধু বনায়ন খাতে শ্রমিক নেওয়া হতো, এবার আর তা থাকছে না। এবার ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ, কৃষিসেবা, বনায়ন, শিল্প-কারখানা, তথ্যপ্রযুক্তিসহ প্রায় সব খাতেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো যাবে। সূত্রমতে, শ্রমিক পাঠনোর কাঠামো নির্ধারিত হবে প্রতিনিধি দলের সফরেই। তবে গত মাসে পুত্রজায়ায় দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুসারে বেসরকারি পর্যায়ে বি-টু-বি যে হচ্ছে তা নিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের কাগজপত্র প্রসেস করবে মালয়েশিয়া। দেশটি থেকে ডিমান্ড লেটার পাঠানো হবে। পাবেন বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিরা। এরপর তা জমা দিতে হবে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনে। পরে হাইকমিশনের কর্মকর্তারা কর্মীর ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবেন। সন্তুষ্ট হলে চাহিদাপত্রগুলো সত্যায়ন করবেন এবং ঢাকায় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোয় (বিএমইটি) পাঠানো হবে। বিএমইটি থেকে সবকিছু খতিয়ে দেখে ছাড়পত্র ইস্যু করা হবে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এই ধাপগুলো অনুসরণ করে শ্রমিক পাঠানো হবে। নতুন কাঠামোতে শ্রমিক পাঠাতে নতুন কোনো নিবন্ধন তালিকা করার প্রয়োজন নেই। কারণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিদেশ গমনেচ্ছুদের বিশাল নিবন্ধিত ডাটাবেজ রয়েছে। সেখান থেকেই পাঠানো হবে মালয়েশিয়ায়। তবে নিবন্ধনের বাইরে কাউকে পাঠানোর সুযোগ থাকছে না। নতুন করে বি-টু-বি কাঠামো তৈরি হলেও সরকারি জি-টু-জি পদ্ধতিও চলমান থাকবে। কেউ চাইলে এ পদ্ধতিও অনুসরণ করা যাবে। অভিবাসন-ব্যয়সহ শ্রমিক রপ্তানির সব দিক সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখবে মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে অভিবাসন-ব্যয়ও ৪০-৫০ হাজার টাকার মধ্যেই রাখার চেষ্টা করা হবে।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য মোটেও ভালো নয়। এর আগে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে নানা ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। ভালো বেতনের কথা বলে মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়ে কোনো চাকরিই দেওয়া হয়নি। পরে গমনকারীদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে। একপর্যায়ে প্রতারণার ঘটনা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, বৈধ পথে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। পরে দীর্ঘ দেন-দরবার করে দুই সরকারের মধ্যে জি-টু-জি পদ্ধতি চালু হয়েছে। তাই এবার শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কঠোর অবস্থানে থাকবে মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর