মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

১২০০ বর্ষী মন্দিরে হিন্দু বৌদ্ধ নিদর্শন

১২০০ বর্ষী মন্দিরে হিন্দু বৌদ্ধ নিদর্শন

দিনাজপুরে মাটির ঢিবি খনন করে বৌদ্ধমন্দিরকে হিন্দু মন্দিরে রূপান্তর করার প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার করেছেন এক দল গবেষক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেনের নেতৃত্বে আবিষ্কৃত এই মন্দির তৎকালীন বরেন্দ্র অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মচর্চার ওপর পরবর্তীকালের হিন্দু শাসকদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধিপত্যের সরাসরি নিদর্শন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খননকারীরা বলছেন, মন্দির দুটির নির্মাণকাল ৮ম থেকে ১১শ শতকের কোনো এক সময়কার। খবর বিডিনিউজ।
এর আগে বাংলাদেশে বৌদ্ধ স্তূপকে হিন্দু মন্দিরে রূপান্তরিত করার উদাহরণ পাওয়া গেলেও বৌদ্ধমন্দিরকে হিন্দু মন্দিরে রূপান্তরিত করার নিদর্শন এটাই প্রথম বলে দাবি করছেন তারা। দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ উপজেলায় আবিষ্কৃৃত এ মন্দিরসংলগ্ন স্থান থেকে প্রথমবারের মতো শারীরিক স্তূপের নিদর্শনও পাওয়া গেছে। গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ দিয়ে স্তূপ নির্মাণ করার ঐতিহ্য মৌর্য সম্রাট অশোক সর্বপ্রথম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দাহ করা দেহাবশেষের ওপর স্তূপ নির্মাণ করার ঐতিহ্য চালু হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল অধ্যাপক স্বাধীন সেন ও অধ্যাপক সৈয়দ  মোহাম্মদ কামরুল আহসানের পরিচালনায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে খনন চালিয়ে আসছেন। দলটি একই উপজেলার মাহেরপুরে প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো একটি হিন্দু মন্দির আবিষ্কার করেন। অধ্যাপক স্বাধীন সেন জানান, ২০১২ সাল থেকে তারা সেতাবগঞ্জ (বোঁচাগঞ্জ) এলাকায় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে করছেন। এ সময় প্রায় ১২৬টি আর্কিওলজিক্যাল সাইট শনাক্ত করা হয়। সেতাবগঞ্জের রণগাঁও ইউনিয়নের বাসুদেবপুর ওয়ার্ডের ইটাকুড়া ঢিবি নামের প্রত্নস্থানে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বর্গমিটারেরও বেশি স্থানে খনন পরিচালনা করে মন্দির দুটো পাওয়া যায়। মন্দির দুটো পাওয়ার পর প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দীপক রঞ্জন দাশ, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের সাবেক অধ্যাপক অরুণ নাগ ও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাডাম হার্ডির সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাপক সেন হিন্দু মন্দিরটিকে শনাক্ত করেন। পুরো মন্দিরটি পুব, উত্তর ও দক্ষিণে বেষ্টনী প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। এই প্রাচীর ত্রিরথ অভিক্ষেপ বিশিষ্ট। এই ত্রিরথ অভিক্ষেপ হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে তিনি জানান। বেষ্টনী প্রাচীর ও গর্ভগৃহের মধ্যবর্তী স্থানে পূর্ববর্তী বৌদ্ধমন্দিরের দেয়াল ও ভরাট করা মাটির ওপর ৩০-৪০ সেমি পুরু মেঝে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর