বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

জেলায় জেলায় বন্যা ভোগান্তি

পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

জেলায় জেলায় বন্যা ভোগান্তি

পানি উঠেছে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের চাটিতোলা হাইস্কুলে। তাই ক্লাস বন্ধ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, আউশ-আমন বীজতলা, সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। বন্যাকবলিত এলাকায় চরম খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র, সড়ক ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে দুর্গত এলাকার লোকজন। ডাকাতিয়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে কুমিল্লার চার উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সেখানে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়ে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে খুলনার নিম্নাঞ্চল। ফরিদপুর ও বাগেরহাটে শহর রক্ষা ও বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুমিল্লা : এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও ডাকাতিয়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তিন লক্ষাধিক মানুষ। নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রামের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় সেখানে অঘোষিত ছুটি চলছে। এদিকে এসব উপজেলায় সরকারের দেওয়া ত্রাণ সহযোগিতা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। টানা প্রবল বর্ষণে নাঙ্গলকোটের ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী সাতবাড়িয়া, বক্সগঞ্জ, ঢালুয়া, মৌকারা, রায়কোট ও বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ওই ছয়টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যাক্রান্ত এলাকাবাসী নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। বন্যায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আউশ ধান, আমন বীজতলা, সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ শতাধিক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস ৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বন্যায় আক্রান্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ২ আগস্ট অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সরেজমিনে ঢালুয়া ইউনিয়নের গোরকমুড়া, মৌকারা ইউনিয়নের মহেশ্বর, ছারিতুপা গ্রামের বন্যায় আক্রান্তদের দুর্দশা চোখে পড়ে। গোরকমুড়া গ্রামে ঢুকতেই পানি থই থই করতে দেখা যায়। ওই গ্রামের ৭০টি পরিবারের সাত শতাধিক সদস্য পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পরিবারগুলোর অভিযোগ, সরকারিভাবে এ পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। গোরকমুড়া গ্রামের অনেক পরিবার নৌকায় করে ধান, নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও গরু সাঁতরে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মহেশ্বর গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে। এ ছাড়া কিছু পরিবার মহেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। গোরকমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের আসা বন্ধ রয়েছে। এদিকে বন্যায় শতাধিক মৎস্য খামারের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানান চাষিরা। কক্সবাজার : টানা বর্ষণ ও সাগরের জোয়ারের পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চল এক সপ্তাহ ধরে পানির নিচে। কমেনি বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ। বৃষ্টি কম হলেও উজান থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখনো পৌঁছায়নি সরকারি কোনো ত্রাণ। ফেনী : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়া সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী রয়েছে। সরকারিভাবে যৎসামান্য ত্রাণ বিতরণ করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। নোয়াখালী : টানা  বর্ষণ এবং ছোট ফেনী ও ভবানী নদীর  ধেয়ে আসা পানিতে ডুবে গেছে জেলার আট উপজেলার শত শত গ্রাম। ভেসে গেছে এসব এলাকার অনেক মৎস্য খামার। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে গেছে রবিশস্যের বীজতলা। গতকাল প্লাবিত হয়েছে আরও বেশকিছু এলাকা। খুলনা : কয়েক দিনের অতিবর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলাগুলোতে শত শত একর জমির আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। পাইকগাছা ও দাকোপ প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে অসংখ্য চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের। ফরিদপুর : ডিক্রির চর ইউনিয়নের মৃধাডাঙ্গী এলাকায় ফের ধসে গেছে পদ্মাতীরবর্তী শহর রক্ষা বাঁধের অন্তত ৫৫ মিটার। তবে পানির নিচে কী পরিমাণ ধসে গেছে তা এখনো নির্ণয় করা যায়নি। বাগেরহাট : লাগাতার বৃষ্টি ও নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বরিশাল : কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলায় ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তরা হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভিড় করেছে।

সর্বশেষ খবর