বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
ছাত্রলীগের গোলাগুলি

চোখ মেলেছে মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু

চোখ মেলেছে মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু

সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন একটি শিশুর দিকে। মাগুরায় মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয় শিশুটি। পৃথিবীতে আসার আগেই ছাত্রলীগের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে তার মা। গুলিটি মায়ের পেটে থাকা শিশুটির পিঠের ভিতর দিয়ে পেট ও গলা ভেদ করে চোখের পাশ দিয়ে বের হয়।

চোখের পাশে গুলি লাগায় গত বৃহস্পতিবার জন্মের পর থেকে শিশুটির একটি চোখ বন্ধ ছিল। তবে গতকাল ঢামেক হাসপাতালে দীর্ঘ এক ঘণ্টার অপারেশনের পর শিশুটি ওই চোখ মেলতে সক্ষম হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুটির অবস্থা আগের চেয়ে ভালো তবে শঙ্কামুক্ত নয়। তাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

জন্মের পর মায়ের কোলে পরম মমতায় যার ঘুমানোর কথা হলেও শিশুটি এখন গুলির আঘাতে জর্জরিত হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। গুলিবিদ্ধ মা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মাগুরা সদর হাসপাতালে। আর তার নাড়ির ধনটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মায়ের বুকের দুধ খেয়ে যার কান্না থামানোর কথা তাকে খাওয়ানো হচ্ছে পাউডার দুধ। গত বৃহস্পতিবার মাগুরার দোয়ারপাড় কালীগর পাড়ায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় অন্তঃসত্ত্বা মা নাজমা বেগম গুলিবিদ্ধ হন। আহত হয় গর্ভে থাকা শিশুটিও। পরে দুই ঘণ্টা অপারেশন করে মায়ের গর্ভ থেকে বের করা হয় কন্যা শিশুটিকে। তার ওজন দুই কেজি যা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ৫০০ গ্রাম কম।

পরে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে শনিবার ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে রাখা হয় ঢামেকের সহযোগী অধ্যাপক কানিজ হাসিনা শিউলির অধীনে শিশু সার্জারি বিভাগের ইউনিট-২ এ। মঙ্গলবার শিশুটির চিকিৎসার জন্য নয় সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়।

গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। ডা. শিউলি জানান, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির শরীরে আঘাত প্রাপ্ত চারটি জায়গায় সেলাই করা হয়। এরপর শিশুটির অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বিকালে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আদিল বলেন, অস্ত্রোপচারের পর শিশুটিকে পোস্ট অপারেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। বেলা দেড়টার দিকে শিশুটির জ্ঞান ফিরে। পরে তাকে নবজাতক ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়।

তিনি আরও বলেন, বড় ধরনের আঘাত না লাগায় শিশুটির অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। তবে তার ডান চোখের ভিশন এরিয়াতে আঘাত লাগায় দৃষ্টি শক্তির সমস্যা হতে পারে। আরও কদিন না যাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, শিশুটিকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় তাকে 'ফর্মুলা মিল্ক' খাওয়ানো হচ্ছে।

ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, একটি উঁচু বেডে শিশুটিকে রাখা হয়েছে। মুখ ছাড়া পুরো শরীর সফেদ নরম কাপড়ে ঢাকা। শিশুটি শ্বাস নিচ্ছে। তার ডান চোখটি ফোলা এবং রক্ত জমাট বেঁধে কালো রঙ ধারণ করেছে। এ ছাড়া তার হাত, বুক এবং পিঠেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শিশুর মামা লাবলু বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ। এখানে আমাদের কেউ নেই। আমার ভাগি্নর যেন ভালো চিকিৎসা হয় সেজন্য সবার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। আর যাদের জন্য এই নিষ্পাপ শিশু মৃত্যুর মুখোমুখি তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।'

 

সর্বশেষ খবর