ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১ হাজার ৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত ৮০৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে উত্তর সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক এ বাজেট ঘোষণা করেন। গত অর্থবছরে বাজেটের আয়তন ছিল ২ হাজার ৪১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এবারের বাজেটে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ছে না বলে ঘোষণা দেওয়া হলেও নতুন ও পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে সমতা আনার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুরনো বাড়ির মালিকদের ট্যাক্স বাড়ানোর আভাস দিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র। এ ছাড়া বাজেট হিসাবে ৯০ কোটি টাকার গোঁজামিলের তথ্য পাওয়া গেছে। মেয়র বলেন, ‘নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে আয়ের প্রত্যাশা ৪১০ কোটি টাকা, যা মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৪৭ শতাংশ। মহাখালী ও আমিনবাজারে সদ্যনির্মিত বাজার থেকে সালামি বাবদ ১৬০ কোটি, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৪০ কোটি এবং সম্পত্তি হস্তান্তর খাত থেকে ১৩০ কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি উন্নয়ন অনুদান হিসেবে ১৩৫ কোটি এবং বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে প্রায় ৪৭৬ কোটি টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা করেছি।’ বাজেট ঘোষণায় সম্ভাব্য ব্যয় প্রসঙ্গে মেয়র জানান, চলতি অর্থবছরে উন্নয়নমূলক খাতে মোট ব্যয় ১ হাজার ১৪৪ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের প্রায় ৭১ শতাংশ। এর মধ্যে ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন কার্যক্রম, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, পানি বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতে বার্ষিক ব্যয় ৩১০ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নে ২৪৯ কোটি টাকা, বাজার নির্মাণসহ ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা, কবরস্থান ও শ্মশান ঘাট সংস্কার ও উন্নয়ন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শেষকৃত্য স্থান নির্মাণ ও উন্নয়ন খাতে ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নের মাধ্যমে নাগরিক ও বিনোদন সুবিধা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, পরিবেশ উন্নয়ন খাতে ৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ও স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় মশক নিধন কার্যক্রম, মশার ওষুধ ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের লক্ষ্যে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দিকে বরাবরের মতো এবারও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গতানুগতিক বাজেট পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাজেটে নতুনত্ব তেমন কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। আনিসুল হকের দায়িত্ব গ্রহণের ৭৬ দিনের মাথায় এই বাজেট ঘোষণা করা হলো। বাজেট অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক, সচিব আবু সাঈদ শেখ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মমতাজ উদ্দিন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ আহসান এবং ডিএনসিসির বিভাগীয় প্রধান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত বোর্ড মিটিংয়ে কাউন্সিলররা মেয়রের সঙ্গে বাজেট প্রস্তাবে সর্বসম্মতি জ্ঞাপন করেন।
হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ালেও আনা হবে সমতা : চলতি বাজেটে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হচ্ছে না। তবে মেয়র জানান, আশির দশকের হোল্ডিং ট্যাক্স নীতিমালা অনুযায়ী পুরনো বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে এক রকম ট্যাক্স আদায় করা হয়, আর নতুন যারা বাড়ি করছেন তাদের কাছ থেকে আরেক ধরনের (পুরনোদের চেয়ে বেশি) ট্যাক্স আদায় করা হয়। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা সংস্করণের মাধ্যমে একটি সমতা আনার কথা চিন্তা করছে সিটি করপোরেশন। সর্বসম্মতিক্রমে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান মেয়র।
বাজেট বইয়ে আয়-ব্যয়ের সমন্বয়হীনতা : ২০১৫-১৬ প্রস্তাবিত বাজেট বইয়ে ৬ থেকে ১১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত তিনটি স্থানে ‘একনজরে’ ‘সংক্ষেপে’ এবং ‘বিস্তারিত বাজেট বর্ণনায়’ আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয়েছে। তবে সেখানে মোট আয় ১ হাজার ৫১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং সর্বমোট আয় ১ হাজার ৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দেখানো হলেও ‘মোট’ ও ‘সর্বমোটের’ মাঝখানে অতিরিক্ত ৯০ কোটি টাকার সংস্থান কীভাবে হবে তার উল্লেখ নেই। সেখানে উল্লিখিত ‘প্রারম্ভিক স্থিতি’ খাতে ৯০ কোটি টাকাসহ ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকার সঙ্গে আরও ৯০ কোটি টাকা যোগ করা হলে তবেই ১ হাজার ৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার হিসাব মিলবে।