বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

মোগল আমলের নয়াবাদ মসজিদ

মোগল আমলের নয়াবাদ মসজিদ

প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের উদাসীনতা আর স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো নয়াবাদ মসজিদটি আজ বিলীনের পথে। তৎকালীন অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত এ অঞ্চলের নয়াবাদ মসজিদ এবং কান্তজিউ মন্দির। কাহারোলের ঢেপা নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী নয়াবাদ মসজিদটি অবস্থিত। দিনাজপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কান্তজিউ মন্দির এবং মন্দির থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার উত্তরে এ নয়াবাদ মসজিদ। কেউ বলেন, মুসলিম শাসনামলে এটি নির্মিত। আবার কারও কারও মতে, রাজা প্রাণনাথ (১৭০৪ খ্রি.) কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করলে এর নির্মাণ কাজে কিছু মুসলিম রাজমিস্ত্রি আগ্রা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের ধর্মকর্ম করার জন্য এ নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণ করা হয়। অন্যদিকে জানা যায়, ১৭০৪-১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে ইরাক, ইরান থেকে আসা রাজমিস্ত্রিরা যখন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ করছিলেন, তখন তারা ওই মন্দিরের পাশে নামাজ আদায় করতেন।
হঠাৎ একদিন দিনাজপুরের প্রখ্যাত জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ ও তদ্বীয় পুত্র রামনাথ মন্দির পরিদর্শনে গেলে তাদের নামাজ আদায় করতে দেখেন। তখন জমিদার রামনাথ মিস্ত্রিদের নামাজ আদায় করার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেন। তখন হেড মিস্ত্রিরা কালুয়া ও নেওয়াজ আলী ঢেপা নদীর তীরে নয়াবাদ গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। কাহারোলের নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত বলে গ্রামের নামানুসারে মসজিদটির নাম হয় নয়াবাদ মসজিদ। মসজিদটি ১৯৬৮ সালে সরকারের আওতায় আনা হয়। মসজিদটি ৩টি গম্বুজ, ৪টি মিনার, ৩টি দরজা ও ২টি জানালাবিশিষ্ট।
 মসজিদের পাশে ১ গম্বুজওয়ালা একটি হুজুরা খান এবং মসজিদের উত্তর পাশে তৎকালীন মিস্ত্রিদের কবর রয়েছে। সংস্কারের অভাবে খুলে পড়ছে মসজিদের কারুকার্য, গম্বুজ মিনার, মেহরাব। মসজিদটি ১২.৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ মিটার প্রস্থ। মসজিদের সামনে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। ৩ গম্বুজ ও ৪ মিনারবিশিষ্ট এই মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, বাতাসে মিনারগুলো দুলতে থাকে। মসজিদের গায়ে পোড়ামাটির ১০৪টি আয়তাকার ভাস্কর কারুকার্য রয়েছে যা সংস্কারের অভাবে খুলে খুলে পড়ছে। দেয়ালে শ্যাওলা জমে ধারণ করেছে বিবর্ণ রূপ। মসজিদ প্রাঙ্গণে কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় অবাধে প্রবেশ করছে হাঁস, মুরগি ও গরু-ছাগল, নষ্ট হচ্ছে মসজিদের পবিত্রতা। স্থানীয় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল মান্নান জানান, মসজিদটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার ভয়ে ভিতরে নামাজ আদায় করা যাচ্ছে না। তাই আবহাওয়া খারাপ হলে আমরা বাইরে বারান্দায় নামাজ আদায় করি। এটা যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

সর্বশেষ খবর