বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চলছে?

ডিজিটাল বাংলাদেশে নিয়মিত আপডেট হচ্ছে না সরকারি ওয়েবসাইট। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের ওয়েবসাইট পুরনো তথ্যে ঠাসা। এমনকি ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও একই চিত্র। পিছিয়ে থাকা এই ওয়েবসাইটগুলোর কারণেই ম্লান হচ্ছে সরকারের নানামুখী ডিজিটাল উদ্যোগ বা অর্জন। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসে তার অফিশিয়াল টুইটার পেজে দিনভর আপডেট দিতে থাকেন। ৩৬ ঘণ্টার ওই সফরে মোদির টুইট বার্তাগুলো গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এর বিপরীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চরম দৈন্যের পরিচয় দেয়। বিদেশি রাষ্ট্রের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সফরের প্রথম দিনের সফর শেষে যেসব ডকুমেন্ট হস্তান্তর ও স্বাক্ষরিত হয়েছে তার একটি তালিকা ও দ্বিতীয় দিনের সফরের পর ‘নতুন প্রজন্ম - নয়া দিশা’ শিরোনামের যৌথ ঘোষণার সম্পর্কে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো কিছুই নেই। এমনকি ‘ঐতিহাসিক’ এ সফরের তেমন কোনো ছবি ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয়নি। ‘পিকচার গ্যালারি’ নামে যে বিভাগ আছে সেখানে গতকাল পর্যন্ত সর্বশেষ ভারতের সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের ছবিগুলোই ছিল। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্মিত হতে হয় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখে। এ ওয়েবসাইটে ‘রিসেন্ট নিউজ’ বিভাগের সর্বশেষ খবরটি গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের। শুরু থেকেই এ ওয়েবসাইটের বাংলা ভার্সনে ক্লিক করলে ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ (বাস্তবায়নাধীন) লেখা ওঠে। এ সাইটের ফটোগ্যালারিতেও সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ছবি দেওয়া হয়েছে। এরপর মোদির সফর ছাড়াও রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের কোনো খবর বা ছবি আপলোড করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির বাজেট বক্তৃতাও গত বছরের। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে মোটামুটিভাবে ডেইলি আপডেটগুলো পাওয়া গেলেও কয়েকটি বিভাগ পুরনো তথ্যে ভরপুর। সেখানে সর্বশেষ ২৩ জানুয়ারি, ২০১৩-এর প্রেস ব্রিফিং আপলোড করা হয়েছে। আর সর্বশেষ প্রেস রিলিজ পাওয়া গেছে গত বছরের ১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর ফটোগ্যালারি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেস (বিজি প্রেস)-এর ওয়েবসাইটে ‘সর্বশেষ খবর’ বিভাগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট ফাইল। আর সর্বশেষ ইভেন্টে গত বছরের ইস্যু নিয়ে লেখা হয়েছে ‘উপজেলা পরিষদের নির্বাচন চলছে’। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও এমন অজস  তথ্য ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। ওয়েবসাইটগুলোয় দেখা গেছে অনেক অসংলগ্নতা এবং সেকেলে তথ্যে ঠাসা বিষয়াবলি। এসব ওয়েবসাইট ছাড়াও বাংলাদেশ বেতার, ডাক বিভাগ, সিটি করপোরেশন কিংবা জেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, ডিপিএইচই, এনআইএলজি, এলজিইডি, বিটিসিএল, গণবিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের অবস্থা আরও করুণ। গতকাল বিটিসিএলের বাংলা ভার্সন ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে হিজিবিজি লেখায় পরিপূর্ণ। সেটি বাংলা না হিব্রু ভাষায় লেখা, তা বোঝার উপায় নেই। ওয়সাইটগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখা গেছে, নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আপডেট দেওয়া হলেও জনগণের চাহিদামাফিক যাবতীয় বিষয়ে আপডেট করা হয় না এমন সরকারি অফিসের সংখ্যাই বেশি। সরকারি অফিসের কিছু কিছু ওয়েবসাইটে ফিডব্যাক (ফলাবর্তন)-এর সুযোগ থাকলেও সেখান থেকে সাড়া পাওয়া যায় না। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওয়েবসাইটগুলোর এ করুণ দশা ম্লান করছে তাদের অর্জন। এমনকি নিজেদের রাজনৈতিক দলের সাইটগুলোর দিকেও নিয়মিত নজর রাখেন না দায়িত্বশীলরা। আওয়ামী লীগের (বাংলা ভার্সন) কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের তালিকায় প্রথম নামটিই সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের। অথচ বছর দুয়েক আগে বিশিষ্ট এই রাজনীতিক পৃথিবী ছেড়ে গেছেন। তার নামের সঙ্গে মরহুম বা আর কিছু লেখা হয়নি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাতটি সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশেরই স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ওয়েবসাইটে বছরের পর বছর ধরে স্ক্রলে (চলমান তথ্য) লেখা আছে ওয়েবসাইট উন্নয়নের কাজ চলছে। সেখানে লেটেস্ট নিউজ বা সর্বশেষ খবর হিসেবে ২০১৩ সালের একটি নোটিস প্রদর্শিত হচ্ছে। নোটিসে জরুরি ভিত্তিতে বিকাল ৪টায় নির্বাহী কমিটির সব সদস্যকে বৈঠকে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর