বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ঢাকার তিন জেলায় হবে মেট্রোরেল

নিজামুল হক বিপুল

ঢাকার তিন জেলায় হবে মেট্রোরেল

২০৩৫ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলা ঘিরে পাঁচটি মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা রেখে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) সংশোধনের জন্য প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে এবং যানজট থেকে মুক্তি দিতে মেট্রোরেলের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সংশোধিত এসটিপির চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়ার কথা রয়েছে। এসটিপি অনুযায়ী তিন জেলা- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিস্তৃতি হবে মেট্রোরেল।

ডিসেম্বরের মধ্যেই এসটিপি চূড়ান্ত করতে চায় সরকার। সংশোধিত এসটিপির বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংশোধিত এসটিপি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আশা করি শিগগিরই আমরা এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পাব। নভেম্বরের মধ্যেই এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করানোর জন্য তোলা হবে।’ তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরপরই সংশোধিত এসটিপি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া এমআরটি-১ ও এমআরটি-৩-এর প্রাক-সমীক্ষার কাজও শুরু হবে এসটিপি অনুমোদনের পরপরই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এএলএমইসি করপোরেশন, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্টস গ্লোবাল লিমিটেড ও কাটাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারন্যাশনাল এসটিপির জন্য যৌথ সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। ঈদের আগে এ সংস্থাগুলো বিভিন্ন অংশীদার সংস্থার মতামত নিয়েছে। এখন পরোক্ষ সমীক্ষা ও প্রত্যক্ষ জরিপের ফলের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হচ্ছে। জানা গেছে, এসটিপির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে রাজধানীর জনসংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। ২০৩৫ সালে এ সংখ্যা হবে দুই কোটি ৬৩ লাখ। অর্থাৎ ৩৫ সালে রাজধানীর জনসংখ্যা ৫৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। দিনে গড়ে ট্রিপ বাড়বে ৭১ শতাংশ। যানজটের তীব্রতাও বেড়ে যাবে। তাই ২০৩৫ সালে গণপরিবহন সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন হবে কমপক্ষে পাঁচটি মেট্রোরেল, দুটি বাস র‌্যাপিট ট্রানজিট (বিআরটি), তিনটি বৃত্তাকার সড়ক এবং ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে। এসটিপির প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে আরও দেখা যায়, ২০৩৫ সাল নাগাদ রাজধানীর যানবাহনের চাহিদার ৬৪ শতাংশ পূরণ করা যাবে পাঁচটি মেট্রোরেল ও দুটি বাস র‌্যাপিট ট্রানজিটের (বিআরটি) মাধ্যমে। আর এর জন্য ব্যয় হবে দুই হাজার ৫৬ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। বর্তমানে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকায় রাজধানীর উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটির নির্মাণকাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এসটিপির সংশোধিত প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ প্রকল্পটিকে দুই দিকেই সম্প্রসারিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী এটিকে উত্তরা থেকে আশুলিয়া এবং মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে এর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাবে আরও ২১ কিলোমিটার। অর্থাৎ মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪১ কিলোমিটার। আর অতিরিক্ত ২১ কিলোমিটার নির্মাণের জন্য ব্যয় হবে ২০৯ কোটি ডলার। সম্প্রসারিত অংশের নির্মাণকাজ প্রতিবেদন অনুযায়ী শেষ হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজীপুর থেকে বিদ্যমান রেলপথ ধরে কমলাপুর হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত আরেকটি মেট্রোরেল রুট করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে এ রুটের গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর অংশ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর হয়ে ঝিলমিল পর্যন্ত অংশের নির্মাণকাজ করা হবে। এটি শেষ হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে। আশুলিয়া থেকে সাভার, গাবতলী, মিরপুর রোড হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনের (নগর ভবন) সামনে দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত স্থাপন করা হবে আরেকটি মেট্রোরেল রুট। এটি হবে সম্পূর্ণ উড়ালপথে। সুপারিশকৃত এ রুটের দৈর্ঘ্য হবে ৪০ কিলোমিটার। মেট্রোরেলের এই তিনটির বাইরে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি মেট্রোরেল রুট নির্মাণ হবে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। ভুলতা থেকে বাড্ডা, মিরপুর সড়ক, মিরপুর-১০, গাবতলী বাস টার্মিনাল, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) হয়ে হাতির ঝিল লিংক রোড পর্যন্ত নির্মাণ হবে আরেকটি মেট্রোরেল রুট। এটির দৈর্ঘ্য হবে ৩৫ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৯ দশমিক ১ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে ও ২৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার উড়ালপথে। প্রতিবেদনে দুটি বিআরটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিআরটি-৩ হবে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক, মগবাজার, শান্তিনগর, গুলিস্তান হয়ে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত। বর্তমানে বিআরটি-২ প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক ও বিমানবন্দর সড়ক থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত অংশের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া ঢাকার পূর্বাংশে বিআরটি-৭ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটি হবে নারায়ণগঞ্জ থেকে ইস্টার্ন বাইপাস হয়ে আশুলিয়া পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, এসটিপি ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। এতে তিনটি মেট্রোরেলের সুপারিশ করা হলেও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে মাত্র একটি প্রকল্প। অন্য দুটির এলাকা এখনো চিহ্নিত করা হয়নি। নানা কারণে এসটিপি নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তাই এর সময়সীমা বাড়িয়ে ২০৩৫ সাল করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর