শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

কাঁঠাল পাতায় ভাগ্যের চাকা

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

কাঁঠাল পাতায় ভাগ্যের চাকা

দিনাজপুরে কাঁঠাল পাতা বিক্রি করে সুবিধা বঞ্চিত কয়েকজন মহিলা তাদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তাদের ভিত্তি করে কাঁঠাল পাতা বিক্রির হাটও গড়ে উঠেছে শহরের বাহাদুর বাজার টিএন্ডটির মোড়ে। এলাকা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেই কানে ভেসে আসবে ‘পাতা লাগে পাতা’। ছাগলের উৎকৃষ্ট ও প্রিয় খাবার কাঁঠাল পাতা। শহরের বিভিন্ন এলাকার ছাগল পালনকারীরা এই কাঁঠাল পাতা কিনে নিয়ে যান। ক্রেতারাই নাম দিয়েছেন কাঁঠাল পাতার হাট। এই হাটের বৈশিষ্ট্য হলো- রোদ, বৃষ্টি, ঝড়সহ প্রাকৃতিক যত দুর্যোগই আসুক না কেন, পাতার বাজার প্রতিদিন বসবেই। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই হাট। কাঁঠাল পাতা বিক্রেতারা জানান, এই পাতার বেচাকেনা করেন ১৫/১৬জন নারী। তারা কোনো না কোনোভাবে সমাজে বঞ্চিত কিংবা স্বামী নির্যাতিতা। তাদের সর্বনিম্ন পুঁজি ৩০০ টাকা, আর সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। পাতার বাজার কতদিন আগে শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে অবশ্য স্থানীয়দের কোনো ধারণা নেই। তবে পাতা বিক্রেতা নারী মহসিনা জানান, পাতা বিক্রির সঙ্গে সংযুক্ত আছেন ১৬ জনের মতো। তারা সবাই এ ব্যবসা করছেন ২০ বছর আগে থেকে। তারও আগে পাতা বিক্রি হতো স্বল্প পরিসরে। তারা প্রতি পাতার আটি বিক্রি করেন ৫ টাকা থেকে ২০ টাকায়। যা লাভ হয় তা দিয়ে চলে মহসিনার ৮ জনের সংসার। তিনি আরও জানান, তার বাড়ি পঞ্চগড়ে। মেয়ের সুখের জন্য বাবা-মা মহসিনাকে বিয়ে দেন স্থানীয় খুরশেদের সঙ্গে। বিয়ের পরই জুয়াড়ি স্বামীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ছেলেমেয়ে নিয়ে মহসিনা চলে আসেন দিনাজপুরে। শুরু করেন পাতার ব্যবসা। এভাবেই শুরু হয় মহসিনার জীবন সংগ্রাম। এই পাতার ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গেই বদলে যায় তার জীবন। আরেক বিক্রেতা রাশেদা বলেন, ‘পাতা বিক্রি করে এখন ছাওয়াল-পাওয়াল নিয়ে ভালভাবেই বাঁচতে পারছি।’ রাশেদার বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দায়। ১০ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। বাবার মৃত্যুর পর স্বামী সালামের হাত ধরে চলে আসেন দিনাজপুরে। কোনো কাজ না পেয়ে মাত্র ৩০০ টাকা পুঁজিতে শুরু করেন কাঁঠাল পাতার ব্যবসা। অরেকজন পাতা ব্যবসায়ী করিমন জানান, গ্রাম থেকে গাছের পাতা কিনে নিয়ে তারা বাজারে বিক্রি করেন। গাছ প্রতি তাদের কখনো ২০০ আবার কখনো ৪০০ টাকা লাভ হয়। যেসব গাছ কাঠ হিসেবে বিক্রি করা হয় কেবলমাত্র সেই গাছের পাতাই কেনেন তারা। তাছাড়াও কখনো ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়লে সেগুলো কুড়িয়ে বাজারে বিক্রি করেন। পাতা বিক্রির কাজ করে তার পরিবারের ৪ জন সদস্য খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছেন। তিনি বলেন, ‘এ ব্যবসা অন্ধকারে আলো জ্বালিয়েছে।’ 

পাতা কিনতে আসা শহরের বালুডাঙ্গার গোলাম মাওলা ও রামনগরের মকলেস জানান, শহরে ছাগলের খাদ্য হিসেবে কোথাও ঘাস কিংবা পাতা পাওয়া যায় না। তাই এখানে কাঁঠাল পাতা ক্রয় করতে আসেন। এ বাজার থাকায় দারুণ সুবিধা হয়েছে তার। তবে অভিযোগে জানা যায়, এই বাজারে ব্যবসা করতে কোনো ‘স্থান ভাড়া’ দিতে না হলেও এলাকার কিছু মাদকসেবী যুবক মাঝে মাধ্যে সমস্যা তৈরি করছে।

 

সর্বশেষ খবর