শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
প্রকৌশলী খিজির খান হত্যাকাণ্ড

মামলা দায়ের, গ্রেফতার নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বাড্ডায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খিজির খানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে নিহতের মেজো ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় মামলা করেন। গতকাল পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অগ্রগতি নেই তদন্তেও। তিনটি কারণকে সামনে রেখে তদন্ত অব্যাহত থাকলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, ধর্মীয় আদর্শ ও খানকা শরিফকে কেন্দ্র করেই খিজির খানকে হত্যা করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, ধর্মীয় মতবিরোধকে কেন্দ্র করে এটি ঘটেছে কি-না তা নিশ্চিত হতে আরও সময় প্রয়োজন। এ জন্য নিহতের মোবাইলফোন ট্রাকিংসহ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খিজির খানের ঘনিষ্ঠদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল দুপুরে জ-১০/১ মধ্যবাড্ডার নিহত খিজির খানের রহমতিয়া খানকা শরিফে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন রফিক নামের একজন। রফিক ওই এলাকাতেই বসবাস করেন। রফিক জানান, তিনি নিজেও খিজির খানের ভক্ত। খিজির খান গরিবদের সহযোগিতা করতেন। গত ঈদের আগেও তাকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান রফিক। খানকা শরিফের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিশাল কক্ষের একপাশে বুক সেলফ। নানা ধরনের ইসলামী     বই রয়েছে সেখানে। দরজার পাশেই ছোট একটি কক্ষ। এরপাশে ভিতরের সিঁড়ি। গোডাউন ভাড়া নিতে কয়েক ব্যক্তি এসেছেন জানার পর ওই সিঁড়ি দিয়ে তৃতীয় তলা থেকে নামেন খিজির খান। মধ্যখানে মিম্বরের মতো করে একটু জায়গা। সেখানে রয়েছে একটি জায়নামাজ। ওই জায়নামাজেই বসতেন তিনি। ঘটনার দিন শুরুতে সেখানে বসেছিলেন। এরপরেই তাকে টেনে তোলে মুখ বন্ধ করে হাত-পা বাঁধা হয়। তারপর টেনেহিঁচড়ে পাশের বাথরুমে নিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। বাথরুমে যাওয়ার আগে দরজায় রয়েছে পর্দা। ঘটনার দিন ওই পর্দা কেটেই হাত-পা বাঁধা হয়। কাটা পর্দাটা গতকালও সেভাবেই ঝুলানো ছিল। একটি সূত্র বলেছে, খিজির খান কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সভাপতি ছিলেন। কুষ্টিয়ার প্রায় ৭০ জনকে নিয়ে আশুলিয়ায় একটি খাস জমি বরাদ্দের চেষ্টা করছিলেন। এর বাইরে পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান হওয়ার সূত্র ধরে কয়েকটি বেসরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। ১০৬ কোটি টাকার একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে তিনি কাজ করছিলেন। পাওয়ারপ্লান্ট সংক্রান্ত কোনো বিরোধ এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খিজির খানের পুত্র আশরাফুল ইসলাম আহমেদ জানান, তার বাবাকে কখনো কেউ হুমকি-ধমকি দিয়েছে বলে তার জানা নেই। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়েও কোনো ধারণা নেই তাদের। তদন্ত সংশ্লিষ্ট অনেক পুলিশের প্রাথমিক দৃষ্টি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং জেএমবির দিকেই। অতীতের পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা হলেও গোপীবাগের লুৎফর রহমানসহ ছয় হত্যা, খুলনার পিতা-পুত্র হত্যা, চট্টগ্রামের ল্যাংটা পীর-মুরিদ হত্যা, একটি বেসরকারি টিভি উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ড ও উত্তরার মাসুম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ফিলিপনগরে নিজ বাড়িতে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে খিজির খানকে। গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় ফিলিপনগর হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে নিজ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় নিহতের মরদেহ নিজ বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আÍক্ষীয়স্বজন ও তার ভক্তরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় ফিলিপনগর হাইস্কুল মাঠে খিজির খানের মরদেহ নেওয়া হলে হাজার হাজার মুসল্লি ও ভক্ত একনজর দেখে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এ সময় নিহতের আÍক্ষার শান্তি কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কোরবান আলীসহ পরিবারের সদস্যরা।

সর্বশেষ খবর