শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সুখবর নেই শ্রমবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুখবর নেই শ্রমবাজারে

 

যারা বিদেশে যাওয়ার আশায় রয়েছেন তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই শ্রমবাজারে। চালু হয়নি নতুন কোনো শ্রমবাজার। বিপরীতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বড় শ্রমবাজারগুলোতেও শুরু হয়নি জনশক্তি প্রেরণের প্রক্রিয়া। সৌদি আরবের বাজার খুলে যাওয়ার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার হলেও বাস্তব অর্থে পুরুষ কর্মীদের জন্য এখনো কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। আবার যে পরিমাণ নারী কর্মী সেখানে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়ছিল তাও সম্ভব হয়নি। একইভাবে মালয়েশিয়ায় আবার ব্যাপকহারে শ্রমিক প্রেরণের কথাবার্তা শুরু হলেও নানা ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যাচ্ছে। ঠিক কোন উপায়ে সেখানে জনশক্তি পাঠানো হবে সেটাই ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না।

জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে বন্ধ থাকা সৌদি আরবের শ্রমবাজার গত ফেব্র“য়ারি মাসে উগ্মক্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায় দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে। পরে শুধু নারী কর্মী প্রেরণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রায় তিন থেকে চার লাখ নারী গৃহকর্মী পাঠানো হবে বলে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ঠিক হয়। কিন্তু সৌদি আরবে অতীতে নারী গৃহকর্মীদের ব্যাপকহারে নির্যাতিত হওয়ার খবরে নারী কর্মীদের ভিতরে সেখানে যাওয়ার তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ৪০ হাজারের ডিমান্ড নোটের বিপরীতে মাত্র হাজার দশেক নারী কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশি পুরুষ কর্মীদের ভিসা বন্ধ থাকায় সেখানে বাংলাদেশের শ্রমবাজার দখল করে নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। গত তিন বছরে সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরের অফিস, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানায় ওই দুই দেশের অন্তত দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি পুরুষ ও নারী শ্রমিকের সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিন দিন কমে আসছে।

সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে বাংলাদেশি মাসুম আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তেলের দাম কমে যাওয়ায় সৌদি আরবে বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এতদিন যারা ওইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছে, তাদের এখন বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। আমরা একটি কোরিয়ান কোম্পানিতে কাজ করি, এখানে ছাঁটাই শুরু হয়েছে। অন্যান্য দেশের লোকজন হাসিমুখে বিদায় নিলেও বাংলাদেশিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক হয়তো ট্রান্সফার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তার ওপর সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় নতুন ট্রান্সফার বিষয়ে নতুন নিয়ম করেছে। স্পন্সরশিপ পরিবর্তন করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তিন মাস। এর মধ্যে একবারই আবেদন করতে পারবে। তার ওপর উভয় স্পন্সরের ক্যাটাগরি হতে হবে গ্রিন। সুতরাং কী ঘটতে পারে সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশি ভিসা সহজে চালু হওয়ার লক্ষণও দেখা যায় না। কারণ ইতিমধ্যে বহু লোক ওমরাহ করতে এসে পালিয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের কিছু এজেন্টের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বা কালো তালিকায় রেখেছে। ধরপাকড়ও অব্যাহত রয়েছে। এখন ইকামা ছাড়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বললেও ধরে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ শুরু হয় দুই বছর আগে। কিন্তু সরকারি পদ্ধতিতে শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে এতটাই ধীরগতি ছিল যে, এতে আশার চেয়ে হতাশাই বেশি ছড়িয়ে পড়ে। অবৈধভাবে নৌপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার হিড়িক পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনা শুরু হয় মালয়েশিয়ায় আবার বেসরকারি পর্যায়ে শ্রমিক পাঠানোর। ঢাকায় সফরে আসেন মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা। কিন্তু কয়েক মাস হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া। এর মধ্যেই বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার জনশক্তি ব্যবসায়ীদের দুটি অংশ পুরো প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। ফলে এখনো অনিশ্চয়তা থেকে বের হতে পারছে না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর