সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জোড়াতালি দিয়ে চলছে দিনাজপুর মেডিকেল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

জোড়াতালি দিয়ে চলছে দিনাজপুর মেডিকেল

ওষুধ আছে। পর্যাপ্ত রোগী আছে।  অবকাঠামোগত সুবিধা আছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই। ফলে স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে প্রায় প্রতিদিন হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। অথচ প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় এক হাজার রোগী। এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালটির কার্যক্রম। এদিকে হাসপাতালে দৌরাত্ম্য বেড়েছে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের। প্রতিদিন সকাল থেকেই এদের হাসপাতালে দক্ষিণ গেটে অবস্থান করতে দেখা যায়। সপ্তাহে দুই দিন ভিজিট করার নিয়ম বলা থাকলেও তারা নিয়ম না মেনে প্রতিদিনই চিকিৎসকদের কাছে যান। জানা যায়, ২৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব রকম সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক ও জনবল সংকট চরমে। ফলে কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার মানুষ। বার্ন ইউনিট খুললেও নেই কোনো চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ২২ জনের স্থলে রয়েছেন ১০ জন। অ্যানেসথেটিস্ট পদ রয়েছে ১১টি অথচ কর্মরত আছেন মাত্র একজন। আউটডোরে ১৮ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছেন ১০ জন। প্রতিটি বিভাগেই কম রয়েছেন চিকিৎসক। অর্ধেকের কম জনবল দিয়ে চলছে এখানকার চিকিৎসাসেবা। বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, নার্সসহ ৭৮২ জন অনুমোদিত পদের জায়গায় কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৪৪১ জন। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এর উপ-পরিচালক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক এলেও অনেকে তদবির করে অন্যত্র চলে যান। এ ব্যাপারে একজন চিকিৎসক জানান, যেখানে প্র্যাকটিসসহ সুযোগ-সুবিধা বেশি সেখানেই চলে যান চিকিৎসকরা। ফলে এখানে চিকিৎসকের স্বল্পতা বেড়ে যায়। চিকিৎসক ও নার্স স্বল্পতার কারণে রোগী ও স্বজনরা জানিয়েছেন তাদের দুর্ভোগের কথা। সরকারি নিয়োগকৃত কোনো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী না থাকায় আউটসোর্সিংয়ের ওপর দিয়ে চলছে ওয়ার্ডবয় ও সুইপারের কাজ। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে নার্সের পদ আছে ৩৮৮টি। তবে কর্মরত আছেন ১৫৮ জন। জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এমনটাই জানালেন নার্সরা। হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সিদ্দিকুর রহমান  জানান,  দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেটিস্ট), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক), সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইউরোলজি), আবাসিক সার্জন (গাইনি অ্যান্ড অবস), আবাসিক সার্জন (ইমারজেন্সি ও ক্যাজুয়ালটি), আবাসিক সার্জন (অর্থোপেডিক), আবাসিক সার্জন (ইউরোলজি), সিনিয়র প্যাথলজিস্টসহ ১০০ জন চিকিৎসক নেই। রেজিস্ট্রারের বিভিন্ন বিভাগের নয়জনের মধ্যে রয়েছেন তিনজন, মেডিকেল অফিসার (ইনডোর) ৩০ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৬ জন। এখানে বিভিন্ন পদের ১৬৫ চিকিৎসক পদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ৬৫ জন। নার্র্সিংসহ দ্বিতীয় শ্রেণির পদ রয়েছে ৩৮৮টি। তবে কর্মরত আছেন ১৫৮ জন। স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় জনবল নিয়োগ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা প্রদানে সহায়তা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহযোগিতা চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালে হাসপাতালটিতে আধুনিক ভবন নির্মাণসহ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় হাসপাতালটি ওই সময় চালু করা সম্ভব হয়নি। জেলার চিকিৎসাসেবার চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০১০ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য এম ইকবালুর রহিম কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে হাসপাতালটি পরীক্ষামূলক চালু করেন। পর্যায়ক্রমে ২৪টি বিভাগের মধ্যে ১৩টি চালু করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর