শিরোনাম
বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খুঁড়িয়ে চলছে বগুড়ায় দুই সরকারি হাসপাতাল

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

খুঁড়িয়ে চলছে বগুড়ায় দুই সরকারি হাসপাতাল

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বগুড়া জেনারেল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতাল। জনবল সংকট, অপরিচ্ছন্নতা, অতিরিক্ত রোগী ভর্তি, অ্যাম্বুলেন্স সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে চলছে বগুড়ার স্বাস্থ্য বিভাগ। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য যাত্রা শুরু হলেও এখন দুটি হাসপাতালই সেবাহীন হয়ে পড়ছে। সমস্যা থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘আমরা সেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ জানা যায়, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বগুড়া জেনারেল হাসপাতালটি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী বগড়ার নামে ১৯৬৩ সালে নামকরণ করা হয়। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর চিকিৎসাসেবায় এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর যত দিন গড়িয়েছে, রাজনৈতিক কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা ততটাই হয়েছে নাজুক। ১০ বছর আগে ১০০ শয্যা থেকে এ হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো রয়ে গেছে ১০০ শয্যার জনবল। প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার, নার্সসহ সবাইকে। এখানে ৭১ জন ডাক্তারের পদে রয়েছেন ৬৬ জন। এ ছাড়া অবেদনবিদের সংকটের কারণে অস্ত্রোপচার ব্যাহত হচ্ছে। নানা কারণে এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা সময়মতো করতে পারেন না রোগীরা। এ হাসপাতালের চারপাশে গড়ে উঠেছে ২০ থেকে ২৫টি ক্লিনিক। হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এর ফিটনেস নেই। এ কারণে ওই অ্যাম্বুলেন্স জেলার বাইরে যেতে পারে না। একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হলেও তা কবে মিলবে জানে না কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনকারী উপ-পরিচালকসহ ডাক্তারদের যাতায়াতের জন্য কোনো যানবাহন নেই।

রোগীদের অভিযোগ, সকাল ১০টার আগে আউটডোরে ডাক্তারদের দেখা মেলে না। ফলে যেসব রোগী সকালে সেবা নিতে হাসপাতালে যান, তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয় ডাক্তারের জন্য। জরুরি বিভাগ থাকলেও সেখানে চিকিৎসা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। একই সঙ্গে হাসপাতাল চত্বরে রয়েছে বাহিরাগত দালাল। তারা ভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে ভাগিয়ে নিয়ে যায় রোগীদের। রয়েছে অপরিচ্ছন্নতা। হাসপাতালের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডাক্তার শেখ মো. আরবাব হোসেন বলেন, শয্যার চেয়ে সব সময় রোগী বেশি ভর্তি থাকে। ফলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। সাধ্যমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া বহিরাগত কাউকে হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। সকালে অনুপস্থিত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিসসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে নির্মিত হাসপাতালের অবকাঠামো অনেকগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থাও অকেজো। তাই হাসপাতালের খেলার মাঠের জায়গায় নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে এসব সমস্যা কেটে যাবে। অন্যদিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। ওই সময় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালেই অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর প্রয়োজন অনুসারে ২০০২ সালে ভিত্তিপ্রস্তর এবং ২০০৬ সালে বগুড়া শহরের ছিলিমপুরে মহাসড়কের পাশে প্রায় ৪০ একর জায়গার ওপর ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। এ হাসপাতালে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ, শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক দুটি ছাত্রাবাস, চিকিৎসকদের জন্য আলাদা ডরমেটরি, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের আবাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে হাসপাতালের জন্য আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামই কেনা হয় ১০০ কোটি টাকার। শুরুতে দক্ষ জনবল না থাকায় দীর্ঘদিন এই সরঞ্জাম গোডাউনে পড়ে থাকে। তবে তিন বছর আগে সরঞ্জামগুলো ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আধুনিক হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলা থেকে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য এ হাসপাতালে আসেন রোগীরা। রোগীদের বাড়তি চাপের কারণে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৯০০ জন। তাই ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স সংকট না থাকলেও রয়েছে কর্মচারী সংকট। এ কারণে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। তাই হাসপাতাল যথাযথ পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। টয়লেট, বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে এসব টয়লেট, বাথরুম ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। সম্প্রতি এখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা পুরোপুরি শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা না হওয়ায় এখানে রোগীদের চাপ প্রচণ্ড বেড়েছে। বহিরাগত দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুদিন আগে কম থাকলেও আবার তা বেড়েছে। মহাসড়কের পাশে হাসপাতাল হওয়ায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হন। ফলে জরুরি বিভাগ এ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য হাসপাতালটিতে দরকার ট্রমা সেন্টার। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, ‘৫০০ বেডের হাসপাতালে রোগী দ্বিগুণ। এই দ্বিগুণ রোগীর সেবা দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর পরও আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। আশা করি শিগগিরই কাটবে এ সমস্যা। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের চেষ্টা চলছে। আউটডোরে ওষুধের সংকট নেই। আমরা বরাদ্দ অনুযায়ী রোগীদের মধ্যে তা বিতরণ করি।’

 

সর্বশেষ খবর