বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

হামাগুড়ি দিয়ে চলছে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল

মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

হামাগুড়ি দিয়ে চলছে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল

খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও কোনো প্রকার জনবল প্রদান না করায় হাসপাতালটি চলছে হামাগুড়ি দিয়ে। দালাল, ওষুধ কোম্পানির এজেন্টদের দৌরাত্ন্য নোংরা পরিবেশ হাসপাতালে চিরস্থায়ী রূপ নিয়েছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন থাকায় হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কার্যত অচল। ফলে হাসপাতালে সর্বত্র দুর্গন্ধ ও নাকে রুমাল দিয়ে ঢুকতে হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির ওয়ালগুলো পানের পিচকারীসহ নানা আবর্জনার দাগ। বার্থরুমগুলো আবর্জনায় ভর্তি। ফলে পুরো হাসপাতালজুড়ে সব সময় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্ঘটনা কিংবা জরুরি কোনো রোগী এলেই এক শ্রেণির দালাল সক্রিয় হয়ে ওঠে। দালালরা রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের নানাভাবে প্রতারণা করছে। ব্যাপক তথ্য অনুসন্ধ্যান করে জানা গেছে, হাসপাতালে উন্নয়ন তথা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে।

এ কমিটির প্রতি ২ মাস অন্তর অন্তর সভা করার কথা থাকলেও, দীর্ঘ ৫ বছর পর সম্প্রতি এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও হাসপাতালের ১০৫ জন লোকবলের মধ্যে একজন লোকও নিয়োগ প্রদান না করায় হাসপাতালটি সুষ্ঠুভাবে চলছে না। ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল চলানো হচ্ছে। ৫০ শয্যার লোকবলে বর্তমানে ২০ জন ডাক্তারের স্থলে রয়েছেন ১০ জন। ৩০০ এমএ ও ৫০০ এমএ ২টি উন্নত এক্স-রে মেশিন রয়েছে। দায়িত্বরত টেকনিশিয়ান পাণ্ডে জানান, পর‌্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বিশেষ ব্যবস্থায় হাসপাতালে পর‌্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অর্থের অভাবে কাজটি ঝুলে আছে। হাসপাতালের  রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাক্তাদের চেয়েও নার্সদের দাপট খুব বেশি। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রোগীরা জানান, দীর্ঘকাল এখানে কর্মরত থাকায় নার্সরা রোগীদের তোয়াক্কা করেন না। দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তাও প্রায় সময় বিকল থাকে বলে রোগীরা অভিযোগ করেন। হাসপাতাল এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে রয়েছে। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব সিভিল সার্জন ডা. নারায়ষ চন্দ্র দাশ জানান, তার দুই বছর অবস্থানকালের ও আগে থেকেই কমিটির কোনো মিটিং হয়নি। এ কমিটির প্রধান স্থানীয় এমপি। সিভিল সার্জন আরও বলেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নয়ন খাত থেকে রোগীদের ওষুধপত্র, খাবার পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জন্য সরকারি অনুমোদনও রয়েছে। তবে ১০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ডাক্তার, নার্সসহ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কোনো নিয়োগ না থাকায় হাসপাতালটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দফায় দফায় চিঠি পাঠিয়েছেন। নবনির্মিত ১০০ শয্যার হাসপাতাল ভবনটিতে গাইনি বিভাগ স্থানান্তর করা হলেও অন্য বিভাগের কাজ শুরু না করায় ভবনের অন্য রুমগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সনাকের অন্যতম সদস্য ও সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর বোধিসত্ত দেওয়ান জানান, আমরা হাসপাতাল নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছি। তবে এখনো সেবার মান তেমন বাড়েনি। বিশেষ করে ডাক্তারদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা উপস্থিত থাকেন না বললেই চলে। এখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন। পরিষদের সদস্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের আহ্বায়ক আলহাজ মো. জাহেদুল আলম জানান, তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতালের উন্নয়নের নানা কাজে হাত দিয়েছেন। বিশেষ করে ১০০ শয্যার হাসপাতালে লোকবল নিয়োগের ব্যাপারে শিগগিরই একটি টিম স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবে। খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নিশীথ নন্দী মজুমদার জানান, হাসপাতালের ডাক্তার শূন্যতা ও উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রশ্নে তিনি জানান, পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগের টেন্ডার হয়ে গেছে, শিগগিরই কর্মী নিয়োগ করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে হাসপাতালের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তা সমাধানের ব্যবস্থা করছি। খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য রফিকুল আলম জানান, হাসপাতালটির খুবই বাজে অবস্থা বিরাজ করছে। নিজ উদ্যোগে ১৪ টন ময়লা হাসপাতাল থেকে অপসারণ করেছেন দাবি করে তিনি সেবার মান উন্নয়নে ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। খাগড়াছড়ি জেলার ৮টি উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও তেমন একটা ভালো নেই। পুরো জেলায় ১২৮ জন ডাক্তারের মধ্যে ৮০ জন ডাক্তার রয়েছেন। উপজেলা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সগুলো অনেকটা বিকল। তাই রোগীরা সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর