শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

খুঁড়িয়ে চলছে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

খুঁড়িয়ে চলছে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল

ঝিনাইদহের স্বাস্থ্যসেবা বেহাল অবস্থায়। কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, স্বজনপ্রীতি নানা কারণে স্বাস্থ্যসেবা নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা-উপজেলাগুলোতে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে নতুন নতুন সংখ্যা যোগ হচ্ছে। এদিকে ১৯ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা

দেওয়ার জন্য স্থাপিত হয়েছিল ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল। হাসপাতালে বর্তমানে বেশি সংখ্যক রোগী সেবা পেলেও যন্ত্রপাতি অকেজো থাকায় বাধ্য হয়ে গরিব রোগীদের বাইরে থেকে গলাকাটা মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। অনেকে টাকার অভাবে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। ফলে হাসপাতালটি এখন করুণ অবস্থায় নিজেই রোগী হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

জানা যায়, ওষুধের অপ্রতুল সরবরাহ, কম শয্যা সংখ্যা ও জনবল সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১১০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে ১০০ শয্যার এ হাসপাতাল চলছে। প্রতিদিন ভর্তি হন গড়ে ১৮৫ থেকে ২০০ জন। বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে (ইনডোর-আউটডোরে) প্রতিদিন যে সংখ্যক রোগীর চাপ সে তুলনায় শয্যা নেই। বেশির ভাগ রোগীকে বারান্দা ও মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হয়। সেই সঙ্গে মিলছে না ওষুধ। ওষুধের চার্ট আউটডোরে টাঙানোর নির্দেশ থাকলেও সেটি টাঙানো হচ্ছে না। ফলে রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ সরবরাহ থাকলেও তা ছয়নয় হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক না থাকায়  রোগীরা মাঝে মধ্যেই হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি থাকলেও টেকনিশিয়ান ও ডাক্তার না থাকায় রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিক থেকে অদক্ষ টেকনিশিয়ান দ্বারা সেবা নিয়ে বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগে দালালের অত্যাচারে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ডাক্তার ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দালালরা রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট প্যাথলজি সেন্টার ও ক্লিনিকে। দুটি এক্স-রে মেশিন ও রক্ত সঞ্চালন বিভাগের কয়েকটি মেশিন নষ্ট থাকার পর নতুন একটি এক্স-রে মেশিন আনা হলেও ইঁদুরে সেটির তার কেটে দেওয়ায় সেটি এখন অকেজো। হাসপাতালে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে কিন্তু সচল রয়েছে দুটি। এতে করে মুমূর্ষু রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ১০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য মাত্র ৪২ জন ডাক্তারের মধ্যে ১৮ জন ডাক্তার রয়েছে। তাদের আবার মেডিকেল সহকারী ট্রেনিং (ম্যাটস) ও নার্সিং ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয় বলে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইমদাদ অভিযোগ করেন। ৭৫ জন নার্সের মধ্যে আছে ৪৫ জন, ৩৬ জন ক্লিনারের মধ্যে আছে ৭ জন। এ অবস্থা দেখে এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী তার সরকারি বেতনের টাকা দিয়ে ১৪ জন ক্লিনার নিয়োগ দিয়েছেন। অন্যদিকে বছরের পর বছর খালি রয়েছে চক্ষু, চর্ম, শিশু, নাক, কান, গলা ও রেডিওলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ। ডাক্তারদের ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতাল চেম্বারে বসার নির্দেশ থাকলেও ১টার পরও বসেন না। ফলে অসহায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। রোগীদের অভিযোগ, রাতে ডেকেও ডাক্তার বা নার্স পাওয়া যায় না। হাসপাতালের নিরাপত্তা খবুই নাজুক। যখন তখন রাতে ওয়ার্ডে লোকজন প্রবেশ করে মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে যায়। বেশির ভাগ ডাক্তার সকাল ৮টায় আসতে পারেন না। এ ছাড়া বেশির ভাগ চিকিৎসকের প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোকাররম হোসেন শহরের সমতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কামাল হোসেন ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, ডা. স্বপন কুমার কুণ্ডু কেয়ার হাসপাতাল, সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. জাহিদুর রহমান আল আমিন ক্লিনিক, সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মোজাম্মেল হক ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে, অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুল করিম ফিরোজ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ও দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. চিত্তরঞ্জন সদর থানার সামনে নিজের চেম্বারে রোগী দেখেন। রোগী দেখার ক্ষেত্রে তারা সরকারি কোনো নির্দেশনা মানেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অপূর্ব কুমার সাহা বলেন, কিছু প্রভাবশালী ও অসাধু ব্যক্তি প্রতিদিন গ্যাস্ট্রিক, ব্যথা, বাত, প্রেসারের ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ফ্রি নেওয়ার জন্য উৎপাত করেন। তাদের জন্য চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ বিষয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, স্বাভাবিক নিয়মেই হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভুলত্র“টি থাকলে তা সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ খবর