টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে উপনির্বাচনে শেষ পর্যন্ত চারজন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ের মাঠে টিকে থাকলেও মূল লড়াই হবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর মধ্যে। এ লড়াই যেন কাঁচা-পাকার লড়াই। সারা উপজেলায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। ভোটাররাও বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্তোরাঁ, পার্ক, হাট-বাজার, অলিগলি, এমনকি সেলুনেও নির্বাচনী আলোচনা। লতিফ সিদ্দিকীর পর কে হতে যাচ্ছেন এই ঐতিহ্যবাহী কালিহাতীর কর্ণধার। আসনটি নিজেদের করে নিতে প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী হেভিওয়েট প্রার্থী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কাছে বয়সের তুলনায় খুবই নবীন। দাদার বয়সী কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে লড়তে হবে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীকে। উজান থেকে নেমে আসা সে ক্ষাতের বিপরীতে টিকে থাকার লড়াইয়ে নৌকার মাঝিকে শক্ত হাতেই হাল ধরতে হবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দৌড়ে তিনটি গ্রুপ বিদ্যমান থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে নেতা-কর্মীরা একই প্লাটফরমে কাজ করবেন বলে জানা গেছে। এর পরও ভিতরে ভিতরে রয়েছে নানা গুঞ্জন। এ আসনে দীর্ঘ সময় আবদুল লতিফ সিদ্দিকীই বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তিনি আওয়ামী লীগে থাকলে অন্য কারও এমপি হওয়ার সুযোগ থাকত না। সেদিক চিন্তা করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ভাবনা। সোহেল হাজারী বয়সে নবীন। তার মধ্যে নেতৃত্বের একটা জাদুকরি দিক রয়েছে, যার কারণে সোহেল হাজারী একবার এমপি নির্বাচিত হতে পারলে দীর্ঘদিনের জন্য অন্য নেতাদের হাত থেকে আসনটির আশা-ভরসা হারিয়ে যাবে। তাই আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীই চান না সোহেল হাজারী নির্বাচিত হোক। ওপরে ওপরে দলীয় প্রার্থীর জন্য কাজ করলেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর ভোটই অন্য বাক্সে চলে যেতে পারে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ থেকে জননেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার ও মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীই ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। তাদের একটি অংশও নীরব বিপ্লবের মাধ্যমে সিদ্দিকী পরিবারের সদস্যকে জয়ী করতে কাজ করছে। এ আসন এলাকায় কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের পৈতৃক বাড়ি। তারই বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর ছেড়ে দেওয়ায় আসনটি শূন্য হয়েছে। এলাকায় সিদ্দিকী পরিবারের প্রভাব এবং কাদের সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে তিনি আসন্ন নির্বাচনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী। তাকে হারিয়ে আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে আওয়ামী লীগকে প্রাণপণ লড়াই করতে হবে। অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচন থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে দূরে রাখতেই ঋণখেলাপির ধোয়া তুলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। নির্বাচন কমিশনও সে আদেশ বহাল রাখে। পরে হাইকোর্ট বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২১ অক্টোবর রিটার্নিং অফিসার মো. আলিমুজ্জামান উপনির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেন। এর পর থেকেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামেন। ইতিমধ্যে গামছা প্রতীক নিয়ে ভোটারদের মধ্যে প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী। তবে কাদের সিদ্দিকী শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবেন কি না ভোটারদের মধ্যে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন কাদের সিদ্দিকীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন। আজ আপিলের শুনানির মধ্য দিয়ে ভাগ্য নির্ধারণ হবে কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করতে পারবেন কি না। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ও দলীয় নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, কাদের সিদ্দিকীকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে চলে আসবে। তা না হলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করে কাদের সিদ্দিকীকে হারিয়ে আসনটি উদ্ধার করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া অপর দুই প্রার্থী বিএনএফের আতোয়ার রহমান খান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইমরুল কায়েসকে মাঠে দেখা যায়নি। আগামী ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদের এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩০২ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে এই উপনির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে ১০৭টি ভোটকেন্দ্রে ৬৬৮টি কক্ষে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মোট ভোটারসংখ্যা ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯২ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৩২ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬০ জন।