বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাগরের রাজা দুর্ধর্ষ ৪১ দস্যু

সায়েদ জালাল উদ্দিন, কক্সবাজার

সাগরে জেলেদের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। মাছ ধরতে গিয়ে প্রতিদিন ডাকাতির শিকার হচ্ছে ট্রলারগুলো। অপহরণ ও লুটের শিকার হচ্ছেন মাঝিমাল্লারা। এর পরও জেলেদের নিরাপত্তা ও জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত বাহিনী কোস্টগার্ডের ঘুম ভাঙেনি বলে অভিযোগ বোট-মালিকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনাদিয়ার দুর্ধর্ষ জলদস্যু জাম্বু বাহিনী, সরওয়ার বতইল্যা বাহিনী ও জলদস্যু-সম্রাট নাগু মেম্বারের ছেলে রাকিব বাহিনী এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, হাটখালী, চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে সাগরে দস্যুতায় জড়িত লোকদের ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেকের নাম উঠে এসেছে। জেলা ফিশিং বোট-মালিকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া জলদস্যুদের তালিকায়ও এদের অনেকের নাম রয়েছে। দুই তালিকা থেকে ৪১ জনের নাম পাওয়া গেছে। এরাই সাগরের রাজা হিসেবে পরিচিত বলে বোট-মালিক ও জেলেরা জানান। এরা হলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাসিন্না ডাকাত, রবি বাহিনীর প্রধান রবি, কর্ণফুলীর ইয়াছিনের ছেলে আহমদ নবী, মহেশখালীর সোনাদিয়ার নাগু মেম্বারের ছেলে রাকিব, বাহাদুর মিয়ার ছেলে সরওয়ার বতইল্যা, মো. ছমদের ছেলে জাহাঙ্গীর, বদি আলমের ছেলে আঞ্জু মিয়া, নুরুল ইসলামের ছেলে বক্কর, শহরের নুনিয়ারছরার নজরুল ইসলামের ছেলে ফারুক, সোনাদিয়ার ফরুখ আহমদের ছেলে রুহুল আমিন, এখলাছ মিয়ার ছেলে মোর্কারম জাম্বু, কালা মিয়ার ছেলে শফি, এ কে ফজলুল হকের ছেলে সাইফুল, মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে মোস্তফা, আলীর ছেলে সুমন, বদি আলমের ছেলে (আঞ্জুর ভাই) নাগু-২, শফিক (অজ্ঞাত পিতা), মৃত কাসিম আলীর ছেলে সিরাজ (বর্তমানে শহরের চরপাড়ার বাসিন্দা), মহেশখালীর ঘটিভাঙার আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল মোনাফ, কালারমারছড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর, পূর্ব ঘোনারপাড়ার মোজাহের মিয়ার ছেলে আবদুস সবুর ও আবদুল গফুর, পুটিবিলার ইউসুফ আলীর ছেলে শামসুল মাঝি, মাতারবাড়ীর শিমুল বাহিনীর প্রধান শিমুল, রাহঘাটের জয়নাল প্রকাশ জয়নাল ডাকাত, কুতুবদিয়ার রমিজ ডাকাতের ভাই ইউনুছ, সহযোগী কাউছার, দিদার প্রকাশ কানান দিদার (পিতা অজ্ঞাত), এখলাস মিয়ার ছেলে মকসুদ, আনোয়ার পাশার ছেলে সাদ্দাম, রহমত আলীর ছেলে আবুল  কালাম, দক্ষিণ ধুরুংয়ের সর্দার বাদল, উত্তর ধুরুংয়ের সাহেদ, আকবর, বলীঘাটের বাদশা, লেমসীখালীর রুহুল কাদের, ছালেহ আহমদ, দরবারঘাটের রুবেল বাহিনীর রুবেল, চুলাপাড়ার আবুল কাসেম আবুইয়া এবং পেকুয়ার রাজাখালীর সেলিম বাহিনীর প্রধান সেলিম। কোস্টগার্ডের কক্সবাজার কন্টিজেন্টের কমান্ডার নান্নু মিয়ার দাবি, স্থলভাগ থেকে সাত কিলোমিটারের বাইরে তারা যেতে পারেন না। নেই পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামাদি। আছে একটিমাত্র কাঠের বোট, যেটি দিয়ে সাগরে অভিযানে নামা অনেকটা দুরূহ ব্যাপার। এর পরও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান। জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, ডাকাতির কারণে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পান। সংঘবদ্ধ দস্যুরা প্রতিনিয়তই ডাকাতি, লুট ও অপহরণ অব্যাহত রেখেছে। গত এক বছরে ৬৩ মাঝিমাল্লাসহ ২১টি ফিশিং বোট অপহরণ হয়েছে। ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছেন ৬৩ মাঝিমাল্লা। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে জলদস্যুদের হাতে ২০০ জনের বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ডাকাতি বন্ধে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। চিহ্নিত ডাকাত দলের তালিকা ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তালিকা ধরে প্রশাসন অভিযানে নামবে।’ এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সাগরে দস্যুতা রোধে মঙ্গলবার দুপুরে ফিশিং বোট মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। বৈঠকে জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে গভীর সাগরে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জলদস্যুতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এলাকাভিত্তিক জলদস্যুদের তালিকা করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়াসহ সব পয়েন্ট ঝুঁকিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বোট-মালিকদের সমন্বয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।

সর্বশেষ খবর