বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

পরিকল্পিতভাবে দেশকে অশান্ত করা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে, তখনই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিদেশি খুন ও তাজিয়া মিছিলে হামলার মতো নাশকতা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার জশলদিয়ায় ঢাকা ওয়াসার মেগা প্রকল্প পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ (ফেজ-১)-এর ভিতপাথর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভিতপাথর স্থাপন করেন।

শেভ (দাড়ি কামানো) করার সময় বা থালাবাসন পরিষ্কার, গাড়ি ধোয়ার সময় কল ছেড়ে রেখে পানির অপচয় না করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

নাশকতাকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি বোমা ছুড়ে আর ৫টি ডিম মেরে দেশের উন্নয়নের গতিধারা বন্ধ করা যাবে- যারা এমন চিন্তা করছেন, তারা ভুল করছেন। তিনি বলেন, আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি, দেব না। একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, এদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির একটা পরিবেশ সব সময় বজায় থাকে। আমরা বলি ধর্ম যার যার উৎসব সবার। হোসনি দালানে বোমা হামলায় যে ছেলেটার প্রাণ গেল সে কিন্তু শিয়া নয়, সুন্নি। যে কজন আহত হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই সুন্নি মুসলমান। আমাদের যে কোনো অনুষ্ঠান আমরা সবাই মিলিতভাবে করে থাকি। তাহলে হামলাটার অর্থ কি হতে পারে! কারা এটা করল, তা ধীরে ধীরে মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাঙালির দুর্ভাগ্য যে, যখন দেশের মানুষ একটু ভালো থাকে, স্বস্তিতে থাকে, শান্তিতে থাকে ঠিক তখনই একটা শ্রেণি অপকর্ম শুরু করে। তারা মানুষ হত্যা করে, জ্বালাও- পোড়াও করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে। এদের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দারিদ্র্যের হার হ্রাস ২২ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করে ৬ দশমিক ৫ ভাগে আমরা নিয়ে এসেছি। মূল্যস্ফিতি হ্রাস করেছি। এমনকি বর্ষাকালে যখন মূল্যস্ফিতি বাড়ে আমরা তা কমিয়েছি। আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। উন্নয়নটা শুধু ঢাকা শহরে নয় বাংলাদেশব্যাপী আমরা করেছি। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিটি মহানগরের বলতে গেলে চেহারা পাল্টে গেছে। প্রতিটি মহানগরে আমরা উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার পানির সমস্যা সমাধানে পদ্মা পানি শোধনাগারের প্রথম পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, জশলদিয়ায় এখন যেটা নির্মিত হচ্ছে, সেটা প্রথম পর্যায়। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়টি নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়টি নির্মিত হলে আরও ৪৫ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির জন্য হাহাকার ছিল। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের প্রথম পর্যায় চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে চালু করা হয় পর্যায়-২ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ঢাকায় পানির চাহিদা ছিল ২১২ কোটি লিটার। তার বিপরীতে আমরা পেতাম ৮৮ কোটি লিটার। এখন ২০১৫ সালে আমরা ২২০ থেকে ২২৫ কোটি লিটার পানি পাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে পানি শোধন করা হয়। আর সেই পানি গাড়ি পরিষ্কার, ইট ধোয়ার কাজসহ বাড়ির গৃহস্থালির কাজে অপচয় করা হচ্ছে। পানির অপচয় কমালে পানির বিলও কম আসবে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোতে ড্রেজিং করে পানিপ্রবাহ নির্বিঘ্ন রাখা, বৃষ্টির পানির যথাযথ ব্যবহারসহ পানির সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক, চীনের একজন সংসদ সদস্য লু ইয়ান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং কিয়াং, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, কূটনীতিক, উন্নয়ন অংশীদার দেশসমূহের প্রতিনিধি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মুন্সীগঞ্জ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রশাসক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাগুফতা ইয়াসমিন এ্যামিলি এমপি, সুকুমার রঞ্জন এমপি প্রমুখ। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, জশলদিয়ায় প্রায় ৯২ একর জমির ওপর পদ্মা পানি শোধনাগার নির্মাণে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি প্রথম পর্বের কাজ বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি ৩৫ লাখ মানুষের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বায়বায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পস্থল থেকে মাটির নিচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে রাজধানীতে পানি সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চায়না সিএমসি।

সর্বশেষ খবর