শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট মাঝারি গার্মেন্ট

জিন্নাতুন নূর

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট মাঝারি গার্মেন্ট

নানামুখী সংকটের কারণে গত এক বছরে রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশে ৬০-এর অধিক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। আর বিদেশি ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনের ফলে বন্ধ হয় ৩৪টি। এ তালিকার আরও কারখানা এখন বন্ধ হওয়ার পথে। এতে বাড়ছে কাজহারা শ্রমিকের সংখ্যা। তৈরি হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ। অন্যদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গত চার বছরে আড়াইশ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। আর ক্ষতি সামলাতে না পারলে চট্টগ্রামে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করা ১২০টি কারখানাও যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। পোশাক মালিকরা আরও জানান, শেয়ার্ড ব্লিডিং বা ভাড়া করা ভবনে থাকা ছোট-মাঝারি কারখানাগুলোই বেশি চাপে আছে। এ ছাড়া বিজিএমইএ-এর সদস্য নয় এমন অনেক কারখানাও ক্ষতি সামলাতে না পেরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা, রানা প্লাজা ধস, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, গার্মেন্টের কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করা ক্রেতা জোটগুলোর চাপসহ সম্প্রতি দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশের ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিজিএমইএ-এর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ কথা ঠিক যে ক্ষতি পোষাতে না পেরে আমাদের ৫০-৬০টি কারখানা গত এক বছরে বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনে ৩৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে শেয়ার্ড ব্লিডিংয়ে থাকা কারখানাগুলো এ তালিকায় আছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যে যদি ভাড়া ভবন থেকে তারা কারখানা সরিয়ে না নেয় তবে এসব কারখানাকে আর অর্ডার দেওয়া হবে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের ছোট-মাঝারি গার্মেন্টগুলো নানা সংকটে বর্তমানে  প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। চট্টগ্রাম ইপিজেডের বাইরে ৭০০ কারখানার মধ্যে আড়াইশ গত চার বছরে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ছোট কারখানা কিছু বড় কারখানার সঙ্গে মিলে গেছে। আর টিকে থাকা ৪০০ কারখানার মধ্যে ২৮০টি সরাসরি রপ্তানিকারকদের অর্ডার পেলেও বাকি ১২০টি সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করছে। কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) চাপ সামলাতে না পারলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সাব-কন্ট্রাক্টে থাকা কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে উদ্যোক্তারা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। মূলত চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কারখানা ভাড়া বাড়িতে থাকায় ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটেও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা। শ্রমিক নেতারা জানান, ছোট-মাঝারি কারখানাগুলোর অবস্থা ভালো নয়। ছোটগুলো অহরহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর বড়গুলো চাপে আছে। অবস্থা এতই খারাপ যে, ক্রেতারা ছোট-মাঝারি কারখানা থেকে অর্ডার ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি দাম কমানোর জন্য বিক্রেতাদের চাপ দিচ্ছেন। এর মধ্যে সোয়েটার ও ওভেন কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার হার বেশি। তারা জানান, ক্রেতারা ভাড়া করা ভবনে থাকা কারখানাগুলোকে কাজ দিচ্ছেন না। এতে পুঁজি হারিয়ে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বকেয়া-বেতন পরিশোধ করতে না পেরেও অনেক কারখানা মালিক কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে বিদেশি ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সিদ্ধান্তে অনেক ক্রেতা শেয়ার্ড ব্লিডিংয়ে থাকা কারখানাগুলোয় কাজ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে ক্ষতির কারণে অনেক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও গার্মেন্ট শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের যে ভূমিকা থাকার কথা তাতে ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, বড় পুঁজির কাছে ছোট পুঁজি টিকতে পারে না। আর ছোট কারখানার অধিকাংশই বড় কারখানাগুলোর সঙ্গে সাব-কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে কাজ করছে। বিজিএমইএ-এর সভাপতি আরও জানান, ‘আমাদের সদস্য নয় এমন আরও ৭০০-৮০০ কারখানা আমাদের না জানিয়ে হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্ষতিতে থাকা ছোট-মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে ইউএসএইড, জাইকাসহ বিদেশি সংস্থাগুলো আইএলও আইন অনুযায়ী স্বল্প সুদে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বিদেশি ফান্ড ব্যবহার করে কীভাবে এ কারখানাগুলোকে সাহায্য করতে পারি তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।’ পোশাক মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর নেতারা জানান, বছরের শুরুতেই চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে পোশাক খাতে বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ কমে যায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। সে সময়ও অনেক ছোট ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

 

সর্বশেষ খবর