বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

তিন দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে হীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

তিন দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে হীরা

রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলার আসামি হুমায়ুন কবীর হীরাকে তিন দফায় ২৫ দিন রিমান্ড শেষে গতকাল রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শফিউল আলমের আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বি এম শহিদুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে জবানবন্দিতে হীরা কী বলেছেন, এ বিষয়ে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। রংপুরে জাপানের নাগরিক হোশি কোনিও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির। হত্যাকাণ্ডের ২৫ দিনের মাথায় গতকাল দুপুরে ডিআইজি তার নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ তিনটি পত্রিকার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান। তিনি কোনিও হত্যাকাণ্ড তদন্তে পুলিশ সদর দফতরের গঠন করা পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রধান। ডিআইজি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ব্যবসায়িক ও আর্থিক কারণে হোশি খুন হননি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের অংশ হিসেবে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এটি স্পর্শকাতর বিষয়, যে কারণে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো তথ্যই দেওয়া যাচ্ছে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা না গেলেও আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। খুনি ও মূল পরিকল্পনাকারীর বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। তবে খুনিরা যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছে, এর ধরন জানা গেছে। দু-একদিনের মধ্যে ব্যালাস্টিক রিপোর্ট হাতে পাব। তখন অস্ত্রের ধরন সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীদের বিস্তারিত জানানো হবে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী খুনের রহস্য উদ্ঘাটন, প্রকৃত খুনি এবং এর নেপথ্যের কারিগরকে শনাক্ত করে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করতে পারব।’ এদিকে কোনিও হত্যা মামলার আসামি হুমায়ুন কবির হীরার তৃতীয় দফায় রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে। তাকে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর তা নির্ভর করবে। তবে তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি হুমায়ুন কবির বলেন, তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে হীরাকে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হবে। ৩ অক্টোবর কোনিও খুন হওয়ার পরপরই হীরাকে আটক করা হয়। পরে তাকে মামলার আসামি দেখিয়ে প্রথমে ১০ দিন এবং পরে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর ১৯ অক্টোবর রাতে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলায় আসামি দেখিয়ে তাকে আরও ১০ দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়। একই দিন রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লবকে আটক করে তাকে ১০ দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়। পাঁচ দিনের মাথায় রিমান্ড বাতিল করে বিপ্লবকে কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকার জাকারিয়া বালার বাড়িতে ভাড়া থেকে কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে জাপানি কোয়েল ঘাসের খামার করেছিলেন কোনিও। পাশেই জাকারিয়া বালার শ্যালক হীরার মাছের খামার। প্রতিদিন তারা একই সঙ্গে মোন্নাফ আলীর রিকশায় করে খামারে যেতেন। ৩ অক্টোবর রিকশায় করে খামারে যাওয়ার পথে সকাল ১০টার কিছু পরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন কোনিও। এদিন হীরা তার সঙ্গে ছিলেন না। তিন দুর্বৃত্ত কোনিওকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়।

এদিকে জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হুমায়ুন কবীর হীরা রংপুর পুলিশের কাছে ১৬৪ ধারায় গতকাল জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, বিএনপি নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও রংপুর জেলা জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের আহ্বয়ক কামাল হোসেন জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন এ তথ্য তিনি জানতেন। এ জন্য ঘটনার দিন তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। পুলিশের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। উল্লেখ্য, হীরা কোনিওর সঙ্গে প্রতিদিন একই রিকশায় তার গবেষণাস্থলে যাতায়াত করতেন।

সর্বশেষ খবর