শিরোনাম
শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে নড়াইল সদর হাসপাতাল

সাজ্জাদ হোসেন, নড়াইল

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে নড়াইল সদর হাসপাতাল

৫০ শয্যার জেলার একমাত্র আধুনিক সদর হাসপাতালটি ২০০৭ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত তা চলছে ৫০ শয্যারও ঘাটতি লোকবল দিয়ে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। হাসপাতালের ভিতরে বাথরুমের গন্ধে রোগীরা বেডে থাকতে না পেরে সব সময় জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখে। হাসপাতালে ময়লা আর আবর্জনায় ভরা থাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে নিয়মিত।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান মুন্সী জানান, ১০০ শয্যার হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক থাকার কথা অন্তত ৪০ জন, সেখানে আছেন মাত্র ২৪ জন, তাও আবার নিয়মিত নন। তও্বাবধায়ক, সিনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু) ৩ জন, সিনিয়র কনসালটেন্ট ৩ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ২ জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), রেডিওলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট ২ জন, মেডিকেল অফিসার ৩ জন, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ১ জন, ডেন্টাল সার্জন ৫ জন, সহকারী সার্জনের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহে দুই দিন মাত্র রোগী দেখেন। এ ছাড়া ৪৪ জন নার্সের মধ্যে আছে ৪৩ জন, আর  টেকনিশিয়ান, অ্যাসিস্ট্যান্টসহ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির অন্তত ১৪২ জন কর্মচারীর স্থলে আছে মাত্র ৪৩ জন। প্রতিদিন হাজার হাজার লোক চিকিৎসা নিতে এলে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। ৩-৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে হয়। অধিকাংশ ডাক্তারের চেম্বার বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় বেশির ভাগ রোগীকে স্থানান্তর করে দেওয়া হয় যশোর অথবা খুলনার হাসপাতালে। প্যাথলজিতে কাজ করেন মাত্র একজন। পরিচিত রোগী ছাড়া কেউ সেবা পান না প্যাথলজিতে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েও বাইরে থেকে অনেক কিছু পরীক্ষা করে আনতে হয়। অথচ প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি রয়েছে হাসপাতালে। প্যাথলজি দুপুর ১২টার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, হাসপাতালের টেকনিশিয়ানরাই বাইরের প্যাথলজিগুলোতে কাজ করেন। প্যাথলজি দুপুর ১২টার পরে বন্ধ হয়ে গেলেও ডাক্তার আর হাসপাতালের টেকনিক্যাল কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জমজমাট বিভিন্ন বেসরকারি প্যাথলজি  সেন্টারগুলো। রোগীদের অর্থ বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের স্বার্থটাই কেবল দেখছেন এসব প্যাথলজিতে কাজ করা সরকারি হাসপাতালের  চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা। ১০০ শয্যার মধ্যে কিছু বেড খালি রাখা হয়। অসাধু কর্মচারীরা দূর থেকে আসা রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেডে জায়গা করে দেন। প্রতিদিন অন্তত শতাধিক রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভর্তি হওয়া এসব রোগীর যেন ভোগান্তির শেষ নেই। স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর হলেও সরকারি দলের ছত্রছায়ায় কিছু ডাক্তার নিজেদের স্বার্থে নার্স  ও কর্মচারীদের ব্যবহার করে নিজেদের গণ্ডি তৈরি করছেন। অসহায় রোগীদের ডাক্তারের নিজস্ব ক্লিনিকে টেনে নিচ্ছেন আর জমি বেচে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। এভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গরিব রোগীরা। সচেতন মানুষ মনে করেন, ডাক্তারদের সেবা দেওয়ার মানসিকতা গড়ে না উঠলে সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসাসেবা সহজ হবে না। সিভিল সার্জন ডা. সুব্রত কুমার সাহা চেম্বার বন্ধ থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, চিকিৎসক কম থাকায় চিকিৎসাসেবায় মাঝেমধ্যে বিঘœ ঘটতে পারে। চিকিৎসকসহ অন্য শূন্য পদ পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশাকরি দ্রুত সব সমস্যার সমাধান হবে।

সর্বশেষ খবর