শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
সফল মানুষ

আত্মপ্রত্যয়ী নারী সুফিয়া

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

আত্মপ্রত্যয়ী নারী সুফিয়া

নিজের হাতে তৈরি বিশেষ ধরনের সুস্বাদু কেক সফলতা এনে দিয়েছে চুয়াডাঙ্গার অসহায় নারী সুফিয়া খাতুন লতার জীবনে। কষ্ট আর অনিশ্চয়তা আত্মপ্রত্যয়ী করেছে তাকে। ধৈর্য আর সততায় সাফল্য পেয়েছেন। মাত্র ৫০ টাকার পুঁজিতে আজ স্বাবলম্বী তিনি। তার সফলতা দেখে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছেন এলাকার অনেক অসহায় মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা শহরের ঝিনেদা বাসস্ট্যান্ড পাড়ার বাসিন্দা মৃত আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন লতা (৫২)। ১৯৯৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী পঙ্গুত্ববরণ করেন। ১৪ বছরের ছেলে রনি আর ১০ বছরের ছেলে সনিকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন লতা। হঠাৎ সংসারের উপার্জন বন্ধ হওয়া, স্বামীর চিকিৎসা, ছেলেদের লেখাপড়া আর সংসার চালানোর চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। দিন দিন বাড়তে থাকে হতাশা। হঠাৎ করেই প্রতিজ্ঞা করেন, স্বাবলম্বী তাকে হতেই হবে। এ প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯৮ সালে বহু কষ্টে সঞ্চিত ৫০ টাকা দিয়ে তৈরি করেন বিশেষ ধরনের কয়েকটি কেক। পরীক্ষামূলকভাবে পরিচিত এক দোকানে পাঠান বিক্রির জন্য। লতার জীবনের নতুন এ যুদ্ধে সহযোদ্ধা হলেন দুই ছেলে রনি আজম আল আকরাম ও সনি আজম আল আতিক। লতা বলেন, ‘আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতে পারতাম। বিশেষ করে কেক-জাতীয় খাবার তৈরিতে সব সময়ই প্রশংসা করতেন আত্নীয়স্বজনরা। দুর্ঘটনায় স্বামীর দুটি পা হারিয়ে যাওয়ার পর প্রথম কিছু দিন সেলাইয়ের কাজ করেছি। কিন্তু তাতে সংসার চলত না। স্বামীর চিকিৎসা আর ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজতে থাকি। প্রথম দিন কেক তৈরি করে দোকানে পাঠানোর পর দোকানির প্রশংসা ও বাড়তি অর্ডার পাই।’ উৎসাহ বেড়ে গেল কাজে। পুঁজি বাড়তে থাকে, উৎপাদনও বাড়ে। পরে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন ‘জননী ফুড প্রোডাক্টস’। তিনি বলেন, ধৈর্য আর সততা থাকলে সফলতা আসবেই। বর্তমানে লতার পুঁজি ১০ লক্ষাধিক টাকা। একসময়ের অসহায় লতার অধীনেই এখন কাজ করেন ২৫ জন নারী-পুরুষ। ২৫টি পরিবার চলে লতার জননী ফুডের আয়ে। চুয়াডাঙ্গার গণ্ডি পেরিয়ে লতার বেকারিদ্রব্য বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর ও রাজবাড়ী জেলায়। ইতিমধ্যেই সুফিয়া খাতুর লতার সফলতার স্বীকৃতি দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১০ সালে সম্মাননা দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা ডেভেলপমেন্ট ফোরামÑসিডিএফ। এ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে ২০১৪ সালে জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, চুয়াডাঙ্গা জেলা ও খুলনা বিভাগীয় পর্যায়ে। লেখাপড়া শেষ করে বড় ছেলে রনি মাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন। ছোট ছেলে সনি করছেন চাকরি। রনি বলেন, জননী ফুডকে বড় পরিসরে করার জন্য আরও বেশি পুঁজির দরকার। কিন্তু ঋণ পেতে ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতা আর এনজিওগুলোর অতিরিক্ত সুদ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে পথে। লতা যখন সফলতার আলো দেখতে শুরু করেছেন তখনই তাদের ছেড়ে না-ফেরার দেশে চলে যান স্বামী আবদুল কুদ্দুস। গত বছরের ৮ নভেম্বর মারা যান তিনি।

সর্বশেষ খবর