শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সুন্দরবনে নৌ চলাচল বন্ধের সুপারিশ

আহসানুল করিম, বাগেরহাট

সুন্দরবনের পশুর চ্যানেলে ৫১০ টন কয়লা নিয়ে এমভি জিয়ারাজ কার্গো জাহাজ ডুবে যাওয়া ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত কমিটি। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ বনের ভিতর দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণসহ সকল প্রকার বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাঈদুল ইসলামের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। অন্যদিকে তলা ফেটে ডুবে যাওয়া কয়লাবোঝাই কার্গো জাহাজের উদ্ধারকাজ গত তিন দিনেও শুরু হয়নি। ডুবে যাওয়া কার্গোটি বেঁধে না রাখায় জোয়ার-ভাটায় স্রোতের তোড়ে প্রায় ৫০ মিটার সরে আসায় মংলা বন্দরের মূল পশুর চ্যানেলটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পশুর চ্যানেলের মধ্যে কার্গোটি এসে পড়লে মংলা বন্দরের জাহাজ চলাচল যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে পশুর চ্যানেলের জয়মণির ঘোল এলাকার ডুবে যাওয়া কার্গো এমভি জিয়ারাজের মাংকি পয়েন্টই (মাস্তুল) ভাটার সময় দেখা যাচ্ছে। জোয়ারের সময় যাতে তা দেখা যায় সে জন্য কার্গোর মাংকি পয়েন্টের সঙ্গে একটি ড্রাম বেঁধে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। মংলা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, কার্গোটির উদ্ধারে মালিক পক্ষ ব্যর্থ হলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ নিজ উদ্যোগে তুলবে। সুন্দরবন বিভাগের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কার্গোটির মাস্টার ভুলু গাজীর নৌযান চালনায় অদক্ষতা, গাফিলতিসহ কার্গোটি মেয়াদোত্তীর্ণ থাকায় খুব সহজে এর অ্যাঙ্কর ছিঁড়ে পাশের অন্য জাহাজ সম্রাটকে ধাক্কা দিলে তলা ফেটে যায়। তলা ফাটা অবস্থায় ৫১০ টন ইন্দোনেশিয়ান পাথুরে কয়লা নিয়ে এমভি জিয়ারাজের গন্তব্যে যাত্রা নেভিগেশন আইনে জঘন্য অপরাধ। সম্রাট কার্গোকে আঘাত করার ফলে তলা ফেটে গেলেও কার্গোটির মাস্টার ও মালিক পক্ষ চরে আঘাত লেগে ফেটেছে বলে প্রচারণা চালান। কার্গোটিতে কোনো হ্যাজ না থাকায় (লোহার ঢাকনা) জোয়ার-ভাটার তোড়ে ত্রিপল সরে গিয়ে কয়লামিশ্রিত পানি সুন্দরবনে ঢুকে পড়ছে। এতে সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সুন্দরবন বিভাগের গঠিত এ তদন্ত কমিটির সদস্য চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার গাজী মতিয়ার রহমান তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিআইডব্লিউটিএ, মংলা কর্তৃপক্ষ ও কার্গোটির মালিক পক্ষের কয়লাবোঝাই ডুবন্ত কার্গোটি উদ্ধারে আশানুরূপ প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে দিন যত যাচ্ছে সুন্দরবনের তত ক্ষতি হচ্ছে। কয়লাবোঝাই জাহাজডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার বলেন, কয়লাবাহী জাহাজডুবি সুন্দরবনের জন্য দীর্ঘ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে থাকা কয়লায় সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন প্রভৃতি সুন্দরবনের পানিতে মিশে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন ও সুন্দবনের জীবমণ্ডলকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং বায়ুমণ্ডলকে দারুণভাবে দূষিত করবে। তিনি দ্রুত জাহাজটি উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে এই কয়লাবাহী জাহাজডুবি একটা সতর্কবার্তা। রামপাল কয়লাবিদ্য্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে প্রতিটি বড় জাহাজে ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আনা হবে। এ কয়লা সুন্দরবনের আকরাম পয়েন্ট থেকে নামিয়ে ছোট ১০-১২টি লাইটার ভেসেলে করে মংলায় আনা হবে। তাতে বছরে প্রায় ৫০০ জাহাজ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে। ২৪ ঘণ্টা সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলে নদীতে কয়লা, তেল-মবিল ও বর্জ্য পড়বে, হর্নের শব্দ, রাতে সার্চ লাইটের আলো প্রাণিকুলের অভয়ারণ্য নষ্ট করবে।

সর্বশেষ খবর