শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইবির শিক্ষা কার্যক্রম চলে ২ ঘণ্টা

নজর নেই কর্তৃপক্ষের

ইকবাল হোসাইন রুদ্র, ইবি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চলে মূলত দুই ঘণ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হলেও তা এখন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টায় পরিণত হয়েছে। তবে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একাডেমিক বিষয়ে নজরদারি আরও কমেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে প্রয়োজনীয় আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ও অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করেন। তাদের ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য বাস রয়েছে। এসব বাস দুই শিফটে চলাচল করে। প্রথমটি  সকাল সোয়া ৮টায় এবং দ্বিতীয় শিফট পৌনে ১০টায় ক্যাম্পাসে আসার কথা। কিন্তু প্রথম শিফটের বাস দেরিতে ক্যাম্পাসে আসে, তাই একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমও দেরিতে শুরু হয়। আবার প্রথম শিফট ক্যাম্পাস ত্যাগ করে দুপুর ১২টায় এবং দ্বিতীয় শিফটে ২টায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত হলেও অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে আসেন। রুটিন অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এই শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা থাকলেও তারা তা নেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও সকাল ১০টার আগে ক্যাম্পাসে আসেন না। আবার বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা সকাল ১০টায় এসে ক্লাস-পরীক্ষা না নিয়ে রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে ধর্মতত্ত¡, কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকাংশ শিক্ষক দুপুর ১২টার প্রথম শিফটে চলে যান। আর যারা ক্যাম্পাসে আবাসিকভাবে অবস্থান করেন তারাও এর ব্যতিক্রম নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বেলা ২টায় শেষ হওয়ার কথা থকলেও গাড়ি ধরার জন্য আধা ঘণ্টা আগেই সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টায় পরিণত হয়েছে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের গাফিলতি ও প্রশাসনের অবহেলায় একাডেমিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে আমরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা না থাকলে শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে আসতে বাধ্য নন। আর যদি কোনো শিক্ষক ক্লাস না নেন তবে তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসন যদি এর তদারকি না করেন তবে ব্যর্থতা তাদের। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা নিলেও নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিল না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধিকাংশ বিভাগে ঠিকমতো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে সেশনজট চরম আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট সভা নিয়মিত হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তবে হামেশাই প্রয়োজনে অথবা নিয়োগ বাণিজ্য করতে বিশেষ সিন্ডিকেট সভার ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের আর দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আলাদা। অনেক সময় সামান্য কারণে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে। তবে যে কোনো সময়ের তুলনায় এ পিরিয়ডে ক্লাস-পরীক্ষা চলমান আছে। আর সেশনজটের সব দায় প্রশাসনের নয়। বিভাগীয় শিক্ষকরা যদি সময়মতো ক্লাস-পরীক্ষা নেন তবে সেশনজট থাকে না। একাডেমিক কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা বার বার উদ্যোগ নিয়েছি।

সর্বশেষ খবর