মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রস্তুত নয় তবু ঢাকঢোল

কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার

আনিস রহমান

প্রস্তুত নয় তবু ঢাকঢোল

বার বার সময় নেওয়া হলেও কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায়ই চলছে কারাগার উদ্বোধনের হাঁকডাক। ইতিমধ্যে কারা অধিদফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ নভেম্বরের পর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সময় অনুযায়ী যে কোনো দিন এই কারাগার উদ্বোধন করা যেতে পারে। আলোচনা আছে চলতি মাসেই উদ্বোধন করা হবে নবনির্মিত এই কারাগারের। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কার্যক্রম শুরু হবে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরের এই কারাগার থেকে। একই সঙ্গে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ১৭৮৮ সালে নির্মাণ হওয়া লাল দেয়ালে ঘেরা এই কারাগারের স্থান হয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়।

কারা অধিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজি-প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, আমরা কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মকাণ্ড শুরু করতে প্রস্তুত। কিন্তু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদফতর তাদের কাজ শেষ করতে আরও তিন মাস সময় চাইছে। এখন সিদ্ধান্ত সরকারের। আর এখন উদ্বোধন হলে সঙ্গে সঙ্গে বন্দীদের সেখানে নেওয়া হবে কি না সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকার বাবু বাজারে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত সেতু থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-মাওয়া সড়কের বাম পাশে রাজেন্দ্রপুরে নতুন এই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অবস্থান। কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই কানে বাজে লোহা-লক্কড় ও ইটপাথরের ঠকঠক শব্দ। সেখানে কর্মরত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা জানালেন, হাতে সময় বেশি  নেই। তাই দ্রুত কাজ শেষ করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। মহিলা বন্দীদের জন্য ছয়তলা একটি ভবন নির্মাণ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সে কাজ শুরু হয়নি। শুধু সীমানাপ্রাচীর তৈরির কাজ চলছে। কারাগারের দক্ষিণে ডেঞ্জার (দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের থাকার জায়গা) সেলের পাশে টিনশেডের নিচে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হলেও পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। সাধারণ বন্দীদের জন্য ছয়তলা বিশিষ্ট ৮টি ভবনের মধ্যে এখনো দুটি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। বন্দীদের ওপর নজরদারি করার জন্য কারাগারের বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা থাকলেও এ কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর বসানোর কথা থাকলেও তা এখনো বসানো হয়নি। তবে ভিআইপি বন্দীদের জন্য একটি, শিশুদের জন্য একটি চারতলা ভবন, দুর্ধর্ষ বন্দীদের জন্য চারটি ছয়তলা ভবন, ভিআইপি ও সাধারণ বন্দীদের জন্য পৃথক দুটি হাসপাতাল, শিশুদের জন্য একটি একতলা বিশিষ্ট স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কারাগারের দক্ষিণ পশ্চিমের সীমানাপ্রাচীর ঘিরে ওয়ার্কশপ, লন্ড্রি, সেলুন, গুদাম ও গম থেকে আটা তৈরির কারখানা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া কারাগার চত্বরে এক হাজার কারারক্ষী থাকার উপযোগী ব্যারাক নির্মাণের কাজও শেষ। ভিআইপি বন্দীদের থাকার জন্য নির্মাণ করা চারতলা ভবনে গিয়ে দেখা যায়, রুমগুলো বেশ বড় আকারের। প্রতিটি রুমের সঙ্গে কমোডসহ বাথরুম, রান্নাঘর ও বেসিন বসানো হয়েছে। কোনো রুমে দুটি কোনো রুমে তিনটি করে সিলিং ফ্যান ঝুলানো হয়েছে। টিউব লাইট রয়েছে ছয় থেকে আটটি। কারাগারজুড়ে লাগানো হয়েছে আম, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, লেবু, আপেল ও কমলা, জবা ফুলসহ নানা ধরনের ফল ও ফুলের গাছ। বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি রিয়াজুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে প্রায় ২৫ ফুট উচ্চতায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চারদিকে সীমানাপ্রাচীর গড়ে তোলা হয়েছে। ভিতরে প্রতিটি ভবন অন্তত ছয় ফুট উচ্চতার পৃথক সীমানা দেয়ালে ঘেরা। সেগুলোতে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। সীমানাপ্রাচীরের চার কোনায় ৪০ ফুট উঁচু চারটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। কারা কর্মকর্তারা বলছেন, ওই টাওয়ার থেকে পুরো কারা এলাকা নজরদারি করা যাবে। কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়ে আটটি ছয়তলা ভবনের মাঝে বিশাল খালি জমি। সেখানে সবজি চাষ করার কথা রয়েছে। এই জমির মাঝে ছোট্ট একটি টিনশেড ঘর। কারারক্ষীরা সেখানে বসে সবজি বাগানে কাজ করা বন্দীদের ওপর নজরদারি করবে। কারাগারের বাইরে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের জন্য আলাদা ভবন, অফিসার্স ক্লাব, স্টাফ ক্লাব, স্কুল, মসজিদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সভার জন্য মিলনায়তন নির্মাণ করা হচ্ছে। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে ১৯৪ একরের বেশি জমিতে তৈরি হয়েছে নতুন কারাগার। এর মধ্যে ৩০ একর জমিতে বন্দীদের জন্য ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এসব ভবনে চার হাজার পুরুষ ও আলাদা ভবনে ২০০ নারী বন্দীর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। তবে আট হাজারের মতো বন্দী থাকতে পারবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর