মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

জাতিসংঘ শান্তি মিশনের প্রভাব বিবেচনা করবে সরকার

বিদেশে অস্ত্র রপ্তানি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশে উৎপাদিত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক বিদেশে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ ধরনের উদ্যোগে শান্তি মিশনে (কর্মরত বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনী) কোনো ধরনের প্রভাব পড়ে কি না সে বিষয়টি যাচাই করবে সরকার। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান রপ্তানি নীতিতে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও তেজস্ক্রিয় পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি সংশোধন করে এসব পণ্য রপ্তানির সুযোগ দেওয়া যায়। তবে এর আগে সম্ভাব্য সব ধরনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রভাব যাচাই করে দেখা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, অস্ত্র রপ্তানির ব্যাপারে সমরাস্ত্র কারখানার বিশেষ আগ্রহ থাকলেও এ ব্যাপারে ‘ধীরে চলো নীতি’তে এগোতে চায় সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, স্পর্শকাতর পণ্য হিসেবে অস্ত্র রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আন্তদেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রভাব বিশ্লেষণ করা উচিত। সূত্র জানায়, অস্ত্র ও বিস্ফোরক স্পর্শকাতর পণ্য। এসব পণ্য বেসরকারিভাবে রপ্তানির সুযোগ নেই। এর ফলে অস্থিতিশীল দেশ বা সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে এসব পণ্য চলে যেতে পারে। সে  কারণে সরকার টু সরকার ভিত্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে অস্ত্র রপ্তানি করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অস্ত্র রপ্তানির ফলে শান্তি মিশনে কোনো প্রভাব পড়বে কি না বা কোনো ধরনের টানাপড়েন সৃষ্টি হবে কি না সেটি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের নিয়ম রক্ষা করে স্পর্শকাতর এ পণ্য রপ্তানি করা যায় কি না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের আন্তদেশীয় ও আঞ্চলিক চুক্তিগুলো প্রভাবিত হয় কি না সেটিও যাচাই করে দেখতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জুলাইয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় (বিওএফ) উৎপাদিত অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে মতামত চায়। একই সঙ্গে অস্ত্র ও বিস্ফোরক রপ্তানির ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে সে ব্যাপারেও অবহিত করতে বলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। ওই সময় অস্ত্রশস্ত্র রপ্তানি সম্পর্কিত চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। এ ব্যাপারে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে মতামত জানিয়ে দেওয়া হবে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, বিওএফ বর্তমানে যে পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক উৎপাদন করছে, তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ হয়ে উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। সমরাস্ত্র কারখানা ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে।

এমনকি দেশের চাহিদা মেটানোর পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিদেশে রপ্তানি করারও সক্ষমতা রয়েছে বিওএফের। প্রধানমন্ত্রী সমরাস্ত্র কারখানার উৎপাদন সক্ষমতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দেশের চাহিদা মেটানোর পর অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।’ জানা গেছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান অস্ত্র-গোলাবারুদ রপ্তানি করে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ হবে সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে তৃতীয় অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রথম চার কোটি ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানি করেছিল। ৩১ বছর পর আবার এ উদ্যোগ নেওয়া হলেও বর্তমানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানির কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু’ (এভরিথিং বাট আর্মস) এই নীতি অনুসরণ করে আসছে।

 

সর্বশেষ খবর