মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঢাকা চিড়িয়াখানা

১০০ কোটি টাকার জমি বেদখল

মোস্তফা কাজল

১০০ কোটি টাকার জমি বেদখল

চিড়িয়াখানার দক্ষিণ অংশের দুই একর জমি দখল করে গড়ে উঠেছে প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা। -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা চিড়িয়াখানার ১০০ কোটি টাকা দামের দুই একর জমি দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এ দখল নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বদলে গেছে চিড়িয়াখানার মানচিত্র। হারিয়ে যেতে শুরু করেছে আড়াই হাজার প্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিপন্ন হতে     পারে অবোধ প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনযাপন। অভিযোগ রয়েছে, পাঁচ বছর আগে একটি মহলের সহযোগিতায় প্রভাবশালী মহলটি চিড়িয়াখানার জমি দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রভাবশালী মহলটি দুই একর জমিতে গড়ে তোলে ঘরবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও পান-সিগারেটের দোকান। এসব অবকাঠামোর কোনো হোল্ডিং নম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া হয়নি। এমনকি ভূমি অফিস থেকে কোনো নামজারি করা হয়নি। নেওয়া হয়নি জমির খাজনা।

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসেও দখল চলে। এ অবস্থায় চিড়িয়াখানার পক্ষ থেকে সাত অবৈধ দখলদারকে জমি ছেড়ে দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয়। তারা হলেন- বাবুল তালুকদার, মুক্তার হোসেন, মিয়াজি তালুকদার, মেনকা বেগম, তাইজুদ্দিন, আসলাম হোসেন ও ফারুক আহমেদ। কিন্তু কয়েকটি সরকারি সংস্থার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কতিপয় ব্যক্তিকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক সাজিয়ে ওই জমির অবৈধ দখলের সহযোগিতা করা হয়। তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাতজন ব্যক্তির কাছে সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ওই জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ আবেদন দাখিল করেন। এই দুই একর জমির অবস্থান মিরপুরের বিশিল মৌজায়। দখলদার চক্রটি ওই দুই একর জমি থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে চিড়িয়াখানা দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করার সময় সেখানে জমির পরিমাণ ছিল ২১৩ দশমিক ৪১ একর। দখলের পর জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১১ দশমিক ৪৩ একর। অবৈধভাবে দখলের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা চিড়িয়াখানার সম্পত্তি কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নানা কারণে ৫ একর জমি বেদখলে ছিল। এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের  সহযোগিতায় ৩ একর জমি দখলদারমুক্ত করা হয়। পরে ওই তিন একর জমি চিড়িয়াখানার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বেদখল থাকা দুই একর জমির বাজার মূল্যে ১০০ কোটি টাকার মতো। এখন দুই একর জমির বেদখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। জানতে চাইলে ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এনায়েত হোসেন বলেন, আমরা জমি দখলদারমুক্ত করার চেষ্টা করছি। অবৈধ দখলের বিষয়ে আসলাম হোসেন দাবি করেন, আমি অবৈধ দখলদার নই। ১২ বছর ধরে ওই জমিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। সরকার যে কোনো শর্তে আমাকে বরাদ্দ দিলে, আমি শর্ত মেনে বরাদ্দ নেব। মেনকা বেগমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি অসুস্থতার অজুহাতে কথা বলতে রাজি হননি। গতকাল সরেজমিন বিশিল মৌজায় অবৈধ দখলে থাকা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার জমিতে একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত ভবন নির্মিত হয়েছে। এভাবে পুরো এলাকায় ১৭টি ভবন নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে আসলাম হোসেন মালিকানাধীন রয়েছে তিনটি দোতলা ভবন ও ২২টি সেমিপাকা ঘর, মিয়াজি তালুকদারের রয়েছে ১১টি দোকান, চারটি সেমিপাকা ঘর। এ ছাড়া ভবনের মালিকদের দাবি, তারা অবৈধ পন্থায় মালিকানা নেননি। আবার কেউ কেউ জমি রক্ষায় আদালতে যাওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া চিড়িয়াখানার পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীরের কাছে গিয়ে দেখা গেছে, অবৈধ দখলে থাকা জমিতে বসতঘর ছাড়াও রিকশার গ্যারেজ, টং ঘর ও পান-সিগারেটের দোকান তৈরি করা হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মিরপুরের ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আফরোজা বেগম বলেন, চিড়িয়াখানার জমি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। রেকর্ড অনুযায়ী বিশিলের জমির বৈধ মালিক ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছর চিড়িয়াখানার নামে সমপরিমাণ জমির খাজনা আদায় করা হয়।  

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর