শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ইয়াবা পাচারে নারী স্কোয়াড

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে এই কৌশল

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ইয়াবা পাচারে নারী স্কোয়াড

ইয়াবা পরিবহনের ‘নিরাপদ’ বাহকে পরিণত হয়েছেন নারী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পাচারকারীরা কৌশল হিসেবে নারীদের ব্যবহার করছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ইয়াবা পরিবহন করে এমন প্রায় শত পেশাদার নারীর স্কোয়াডের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। এরই মধ্যে পেশাদার নারী ইয়াবা বহনকারীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করেছে। গত তিন মাসে প্রায় অর্ধশত নারী ইয়াবা বহনকারীকে গ্রেফতার করেছে প্রশাসন।

র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার কৌশল হিসেবে ইয়াবা পরিবহনে নারীদের ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। কারণ নারীদের তল্লাশি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  নারী সদস্য দরকার। অনেক সময় টহল দলের সঙ্গে নারী সদস্য থাকেন না। মূলত এ সুযোগ গ্রহণ করতে ইয়াবা পরিবহনে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন ও ক্রাইম) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইয়াবা পাচারে নারীদের ব্যবহার করার বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ নারীদের তুলনামূলকভাবে সন্দেহের বাইরে রাখে বলে তারা এ সুযোগ গ্রহণ করে। ইয়াবা পাচারে যারা নারীদের ব্যবহার করছে তাদের তালিকা তৈরি করছে পুলিশ।’

চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী আসলাম বলেন, ‘নারীদের সহজে মোটিভেশন করতে পারে বলে ইয়াবা পরিবহনে তাদের ব্যবহারের হার বেড়েছে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে, আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিন পেতে এবং নারীদের দিয়ে অধিক পরিমাণ ইয়াবা পরিবহন করা যায় বলে ইয়াবা পাচারকারীরা নারীদের ব্যবহার করছে। এ ছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে বেশি পরিমাণ আয়ের লোভ দেখিয়ে নারীদের ইয়াবা পাচারে আকৃষ্ট করে পাচারকারী। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রায় শত নারী ইয়াবা বহনকারীর সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা নারী এবং তারা বেশির ভাগই কক্সবাজার ও টেকনাফের অধিবাসী। তারা পর্যটক ছদ্মবেশে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ইয়াবা পরিবহন করে থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্থান ভেদে ইয়াবা বহনের জন্য প্রতি হাজারে পাঁচ কে দশ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন বহনকারীরা। গত তিন মাসে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পরিবহনের সময় অর্ধ-শতাধিক নারীকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রামের র‌্যাব, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ অন্য সংস্থাগুলো। যার মধ্যে কমপক্ষে পনেরজনকে গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মোহসীন বলেন, ‘দারিদ্র্যকে পুঁজি করেই নারীদের ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহার করছে ইয়াবা পাচারকারীরা।’

জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, হেরোইনসহ রাশেদা প্রকাশ রজিনা নামে এক নারী ইয়াবা বহনকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ৯ অক্টোবর নগরীর বাকলিয়া থানাধীন কর্ণফুলী সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে রিজিয়া আকতার নামে এক নারী ইয়াবা বহনকারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাত হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ৪ অক্টোবর নগরীর বন্দর থানাধীন হালিশহর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, গাঁজাসহ স্বপ্না বেগম ও রানু আকতার নামে দুই ইয়াবা বহনকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ১৬ অক্টোবর নগরীর সদরঘাট থানাধীন কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, হেরোইনসহ রাশেদা আকতার খুকি, আনজু বেগম এবং শিরিন আকতার নামে তিন নারী ইয়াবা বহনকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

 

 

সর্বশেষ খবর