মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

১৩ কোটি সিম নিবন্ধন নিয়ে চ্যালেঞ্জে মন্ত্রণালয়

লাকমিনা জেসমিন সোমা

১৩ কোটি সিম নিবন্ধন নিয়ে চ্যালেঞ্জে মন্ত্রণালয়

প্রায় ১৩ কোটি গ্রাহকের মোবাইল সিম পুনরায় নিবন্ধন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে নিবন্ধন কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ হচ্ছে না সেই গতিতে। কার্যকরী এবং পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে বিষয়টিকে এখনো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন না অনেকে। তাছাড়া এই কার্যক্রমের শুরু থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা দফতরগুলো ছাড়াও অপারেটরদের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দেওয়ায় পুরোপুরি বিভ্রান্তি কাটেনি গ্রাহকদের। একই সঙ্গে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ কতটি সিম তার নিজের নামে নিবন্ধন করতে পারবেন কিংবা ১৮ বছরের কম বয়সীরা কীভাবে কতগুলো সিম বাবা-মায়ের নামে নিবন্ধন করতে পারবেন-এমন অনেক বিষয়েই এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এ প্রসঙ্গে ডাক টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সত্যিকার অর্থে এই সেক্টরে গোড়া থেকেই কোনো শৃঙ্খলা বা নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কী পরিমাণ সিম অনিবন্ধিত তাও অপারেটরগুলো স্বীকার করছে না। এখন এই বিপুল পরিমাণ সিম কীভাবে কাগজপত্র ছাড়া বিক্রি হলো, কারা কিনল সেটি জেনে-বুঝে পুনরায় সব সিমের নিবন্ধন তথা ডাটাবেজ তৈরিই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। একাধিক সিম ও ১৮ বছরের কম বয়সী গ্রাহকদের প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে কিছুটা গরমিল থেকে গেছে। আমরা খুব দ্রুত এটি নিয়ে বসব। একজন ব্যক্তি করপোরেট সিমসহ সর্বোচ্চ ১০-১২টি সিম ব্যবহারের সুযোগ পাবে-এমন একটি নিয়ম করার কথা ভাবা হচ্ছে। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের বাবা-মায়ের নামেই সিম নিবন্ধন করতে হবে এবং তারা কোনো অপরাধ করলে দায়ভার বাবা-মায়ের ওপরই বর্তাবে। জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙ্গুলের ছাপ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ওইদিন উদ্বোধন হলেও ঘোষণায় বলা হয়, ১ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রাহকরা কাস্টমার কেয়ার থেকে সিম নিবন্ধন করতে পারবেন। একই সঙ্গে আবার বলা হয়, আগামী ১৬ ডিসেম্বর (আরও দেড় মাস পর) থেকে অপারেটররা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করবেন। অথচ, ১৫ অক্টোবর থেকেই সিম নিবন্ধনের জন্য গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে জন্ম তারিখ ও এনআইডি নম্বর (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর) চেয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো শুরু করে অপারেটরগুলো। অর্থাৎ, ঘরে বসেই সিম নিবন্ধনের অনুরোধ জানায় কোম্পানিগুলো। এর আগেও নতুন কিংবা পুরনো সব সিম নিবন্ধন করতে হবে কি না- তা নিয়ে সমন্বয়হীন বক্তব্য দেন সংশ্লিষ্টরা। প্রথমে বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১২ সালের আগে কেনা নিবন্ধিত সিম পুনরায় নিবন্ধের প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, নতুন পুরনো সব সিমই পুনরায় নিবন্ধন করতে হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে অনেকটা ভিন্নমত দেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। আর এভাবেই শুরু থেকে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীন তথ্যের কারণে অনেকটা বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় গ্রাহকরা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের আগে জাতীয় পরচিয়পত্র না থাকায় বিক্রিত অধিকাংশ সিমেরই ডাটাবেজ নেই। বিশেষ করে কোম্পানিগুলো রিটেইলার বা ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কাছে গণহারে যেসব সিম বিক্রি করেছে সেসব সিমের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। অন্যদিকে ২০১২ সালের পর থেকে জাতীর পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সিম বিক্রি হলেও সেখানেও অনেক ফাঁকফোকর থেকে গেছে। আর সে কারণেই দেখা গেছে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে একই সঙ্গে ৬টি মোবাইল অপারেটর থেকে ১৪ হাজার ১১৭টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করা হয়েছে। জানা গেছে, ১৩ কোটি সিমের মধ্যে বর্তমানে কী পরিমাণ সিম অনিবন্ধিত তাও জানে না অপারেটরগুলো। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাওয়া হলেও অপারেটরগুলো তার সঠিক হিসাব দিতে পারেনি বা দেয়নি। টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, টেলিফোন অপারেটরগুলো প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন লাখ এবং সর্বনিম্ন ২০ হাজার করে সিমের এনআইডি ভেরিফিকেশন যাচাইয়ে সক্ষম হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই গতিতে কাজ হলে নিবন্ধনের কার্যক্রম কতদিনে শেষ হবে তা নিয়েই সন্দিহান তারা।

 কেননা, এর আগে ২০০৮ সালে যখন নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তখন মাত্র তিন কোটি সিম নিবন্ধনে সময় লেগেছিল প্রায় দুই বছর। অভিযোগ উঠেছে, সিম নিবন্ধনে গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করতে যে পরিমাণ প্রচার-প্রচারণা দরকার তেমনটি করছে না অপারেটরগুলো। অন্যদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকেও প্রচার-প্রচারণা বাবদ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জনগণকে জানাতে ইতিমধ্যে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও তার পরিমাণ খুবই নগণ্য। গণমুখী প্রচারের জন্য আরও কিছু মাধ্যম ও কৌশল অবলম্বনে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হলেও তা পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এখানে একেকজনের একেক মত, চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না। জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রচার-প্রচারণার অভাবে এখনো তৃণমূলের স্বল্পশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত, বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী গ্রাহকরা সিম নিবন্ধন বিষয়ে এখনো তেমন কিছু জানে না। রাজধানীর মিরপুর এলাকার রিকশাচালক মহসিন বলেন, কল ধরা আর কল করা ছাড়া আর কিছুই বুঝি না। অপারেটরদের পক্ষ থেকে পাঠানো সিম নিবন্ধন সম্পর্কিত মেসেজ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মেসেজ পড়মু ক্যামনে। সরকার সিম বন্ধ কইরা দিলে দিক। কী আর বলমু। তার মতো এমন বহু গ্রাহকের কাছ থেকেই এ ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে টেলিফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) সিও টিআইএম নুরুল কবীরের মোবাইল ফোনে কল এবং টেক্সট করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর