বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নেই আর নেই ফেনী সদর হাসপাতালে

জমির বেগ, ফেনী

নেই আর নেই ফেনী সদর হাসপাতালে

নেই আর নেই নিয়ে চলছে ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল। জনবল সংকটে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি এখন কাহিল। প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলাবিশিষ্ট আধুনিক এই হাসপাতালটি ২০১৪ সালে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ফেনীর  ১৬ লাখ মানুষের পাশাপাশি খাগড়াছড়ির রামগড়, নোয়াখালীর বসুরহাট ও সেনবাগ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে এ হাসপাতালে। অথচ এক বছরেও পূরণ হয়নি জনবল সংকট। ১০০ শয্যার জনবলের ছিটেফোঁটাও নেই এ হাসপাতালে। হাসপাতালে ২৬ জন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র চারজন। অ্যানেসথেসিয়ার তিনটি পদের মধ্যে তিনটিই শূন্য। জরুরি বিভাগে সাতজনের বিপরীতে আছেন দুজন। ইনডোরে নয়জনের বিপরীতে দুজন। বহির্বিভাগে পাঁচটি পদের মধ্যে পাঁচটি এবং রেডিওলজিস্ট ও প্যাথলজিস্টের দুটির মধ্যে দুটি পদই শূন্য। তবে কনসালটেন্টের ২০ পদের মধ্যে ১৯ জনই কর্মরত আছেন। সেবিকার (নার্স) ৮৭ পদের মধ্যে ২৩টি শূন্য। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ৩৯টি পদের মধ্যে ১৯টি এবং চতুর্থ  শ্রেণির কর্মচারী ৭৩টি পদের মধ্যে ৪৬টিই শূন্য। হাসপাতালটিতে নেই নিজস্ব কোনো ডোম। হাসপাতালের জরুরি বিভাগটি খুবই ছোট। পুরনো জরুরি বিভাগে একসঙ্গে আট-নয়জনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো। তবে নতুন জরুরি বিভাগে তিনজনের বেশি রোগীর সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া আইসিইউ  এবং সিসিইউ বিভাগ করা হলেও এখনো তা চালু করা সম্ভব হয়নি। উদ্বোধনের পর থেকেই এই দুটি বিভাগের সদর গেটে তালা দেওয়া রয়েছে। চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়,  এসব বিভাগে প্রতিটি বেডে সেন্ট্রালি অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের নিয়ম থাকলেও এখানে এ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। উন্নত মানের বেড নেই। যেসব যন্ত্রপাতি আইসিইউ ও সিসিইউতে থাকা দরকার তাও কেনা হয়নি। প্রায় এক বছর আগে হাসপাতালটির লিফট উদ্বোধন করা হলেও এখনো তা বুঝিয়ে দেননি ঠিকাদার। অথচ  গণপূর্ত বিভাগ থেকে ঠিকাদার লিফটের ৩৮ লাখ টাকার মধ্যে ২৮ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন অনেক আগেই। হাসপাতালটিতে জেনারেটর স্থাপন করা হলেও এখনো ঠিকাদার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তা বুঝিয়ে দেননি। জেনারেটর না থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে এখানে সৃষ্টি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ। রোগীদের মোমবাতি ও চার্জার লাইট নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করতে হয়। এ ছাড়া বহুদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনসহ নানা যন্ত্রপাতি। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগের শেষ নেই। শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি এক শিশুর বাবা হাফেজ আহম্মদ জানান, তার বাচ্চাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রথমে চিকিৎসক না থাকার অজুহাতে কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে চায়নি। পরে চাপাচাপির কারণে বাধ্য হয়ে ভর্তি নিয়েছে। তবে ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না তারা। হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। জানে আলম নামে আরেক অভিভাবক জানান, অনেক বেড খালি থাকার পরও টাকা না দিলে রোগীদের মেঝেতে থাকতে হয়। টাকা ছাড়া এখানে সিট পাওয়া যায় না। খাবারের মান অত্যন্ত নিন্ম। রোগী আমেনা বেগম জানান, টাকা না দিলে ওয়ার্ড বয়রা কক্ষ পরিষ্কার করে না। এ বিষয়ে বলা হলে অকথ্য ভাষায় তারা গালিগালাজ করেন। টয়লেট ও ওয়াশ রুমও তারা পরিষ্কার করে না। কয়েকজন নার্স ও বয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাসপাতালের কয়েকজন চিহ্নিত স্টাফ ওষুধ নিয়মিত বাইরে নিয়ে যান। হাসপাতালের কেবিন নিয়েও টাকা আÍসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে সেবা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, দুর্ঘটনায় সামান্য আহত, জটিল রোগী, এমনকি সিজারের রোগীদের এখানে রাখা হয় না। তাদের ঢাকা বা চট্টগ্রামে রেফার করে দেওয়া হয়। আবার দালালরা তাদের ফুসলে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অথচ ক্লিনিকগুলোতে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরাই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। দালালদের পছন্দের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া এখান থেকে অন্য অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া যায় না। এসব বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ছারওয়ার জাহান বলেন, ‘দৈনিক এখানে এক থেকে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ভর্তি থাকেন গড়ে সাড়ে সাড়ে তিনশ’ রোগী। জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কারণে আমরা হয়তো ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে পারছি না। তবে আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বাÍক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর অভিযোগগুলো সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইসমাঈল হোসেন সিরাজী জানান, হাসপাতালটির সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। দ্রুতই জনবল ও যন্ত্রপাতির সমস্যার সমাধান করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর