বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রোগীর ভারে হিমশিম শেরপুর হাসপাতাল

শেরপুর প্রতিনিধি

রোগীর ভারে হিমশিম শেরপুর হাসপাতাল

শেরপুর জেলা হাসপাতালটি ১০০ বেডের হলেও গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হন প্রায় ৩০০। হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী থাকছেন। এর ফলে হাসপাতালের বারান্দা, বাথরুমের দরজা ও বিভিন্ন জায়গায় রোগীদের গরু-ছাগলের মতো পড়ে থাকতে হচ্ছে। রোগীর ভিড়ে পা ফেলারও অবস্থা থাকছে না। ১০০ শয্যার হাসপাতালে ৩০০ রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসা বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন সিভিল সার্জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসের ১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে মোট রোগী ছিল ৮ হাজার ২০ জন। এ মাসের ১ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত রোগী ছিল ১ হাজার ৬৬৩ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা ছিল ২৫০ জনের ওপরে। বছরজুড়ে প্রতিদিন শয্যাপ্রতি গড় রোগীর সংখ্যা ২.৫৯ জন। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ অবস্থা। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের প্রতিদিন ভর্তি রোগী দেখতে দেখতে বেলা পার হয়ে যায়। যার জন্য বহির্বিভাগের রোগীরা সপ্তাহ ঘুরেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেখা পান না। বাধ্য হয়ে রোগীরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে যেতে বাধ্য হন। অনেকেই জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিনের লম্বা লাইনে বারান্দায় যাওয়া আসা দুরূহ হয়ে পড়ে। ভর্তি রোগী বা রোগীর লোকজন ডাক্তারের কাছে একটু বেশি কথা বললেই রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হাসপাতালের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাক্তার সমস্যা হাসপাতাল জন্মের পর থেকে লেগেই আছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পায়নি। জেলার এই হাসপাতালে ৩৬ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও ১৪ পদে ডাক্তার নেই দীর্ঘদিন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আইনগত জটিলতার কারণে পদ পূরণ হচ্ছে না। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এক্সরে ফিল্ম সংকট চলছে। এদিকে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, একেক ডাক্তারের সঙ্গে একেক প্যাথলজির কন্ট্রাক রয়েছে। ফলে সরকারি হাসপাতালের চেম্বারে বসে কন্ট্রাক করা প্যাথলজিতে কারণে-অকারণে রোগীদের পাঠিয়ে টেস্ট করার নামে ভুক্তভোগীদের পকেট থেকে নেওয়া হচ্ছে টাকা। ডাক্তারের নির্ধারিত প্যাথলজি ছাড়া কেউ পরীক্ষা করালে ডাক্তার রিপোর্টটি ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেন না। রোগী বাগিয়ে নিতে সার্বক্ষণিক দালালরাও থাকে তৎপর। আর মারামারি সংক্রান্ত  সার্টিফিকেট তদবিরে অতিষ্ঠ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

করুণ অবস্থা উপজেলায় : জেলা বাদে অপর ৪ উপজেলা হাসপাতালের অবস্থা আরও করুণ। হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া কঠিন। ম্যালেরিয়া পরীক্ষা ছাড়া উপজেলার হাসপাতালগুলোতে কোনো পরীক্ষা হয় না। ঝিনাইগাতী উপজেলা হাসপাতালে অর্ধযুগ পর এক্সরে  মেশিনটি ঠিক করা হলেও আবার নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। নকলা উপজেলা হাসপাতাল চলছে স্থানীয় কয়েকজন দাপুটে ডাক্তারের প্রভাবে। দিনের দুই ঘণ্টা বহির্বিভাগ কোনো রকম চললেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সব করাতে হয় বাইরে। নালিতাবাড়ী উপজেলা হাসপাতালের ডাক্তার উপস্থিতি নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। ৯ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও আছেন ৪ জন। এসব ডাক্তার নিয়মিত থাকেন না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

হাসপাতালের বেশকিছু যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে প্যাকেটবন্দী পড়ে থাকলেও লোকবল ও জায়গার অভাবে খোলা যায়নি। শ্রীবরদী হাসপাতালে ডাক্তার উপস্থিতি ও চিকিৎসা নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে জেলার সিভিল সার্জন আনোয়ার হোসেন জানান, লোকবলের অভাব থাকলেও সীমিত সম্পদের মধ্যে মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।  হাসপাতালে প্রচণ্ড ভিড়ে  চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেন, জেলা হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হয়ে গেলেই সংকট থাকবে না। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণাধীন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর