শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভুয়া আইডির ছড়াছড়ি ফেসবুকে দেখার কেউ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভুয়া আইডির ছড়াছড়ি ফেসবুকে

দেখার কেউ নেই

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে উলে­খযোগ্য পরিমাণই ভুয়া আইডি দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এর ফলে ফেসবুকের মাধ্যমে যেমন প্রতারণার ঘটনা বাড়ছে তেমনি বিকৃত ছবি ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ব্যবহার করায় সমাজে বিভ্রান্তি বাড়ছে। একজন প্রকৃত ব্যবহারকারী তার পরিচিত মহলে বিব্রত হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি, মন্ত্রী, নেতা ও পত্রিকার সম্পাদকসহ সুশীলসমাজের প্রতিনিধি এবং অনেক শিল্পী তারকার নামে ভুয়া আইডির ছড়াছড়ি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তেমন ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়গুলো জানার পরও কার্যত তা ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ বিটিআরসির ভাষ্য, ফেসবুক ও গুগল কর্তৃপক্ষ তাদের পর‌্যাপ্ত সহায়তা না দিলে তারা ভুক্তভোগীদের জন্য আপাতত পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারছেন না। তবে শিগগিরই ভুয়া আইডি চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা যায়, সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০১৫’-এর খসড়ায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির প্রস্তুতি চলছে। ফেসবুকে পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অনেকেরই অ্যাকাউন্ট না থাকলেও তাদের নাম ও ছবি ব্যবহার করে হামেশাই অসাধু কিছু ব্যবহারকারী ও চক্র খুলছে ভুয়া অ্যাকাউন্ট। উদ্বেগের বিষয় এই যে, এর অনেকটিতেই উসকানিমূলক, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে আপত্তিজনক ছবি ও ভাষা। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। জানা যায়, সাইবার হয়রানি থেকে রক্ষা করতে গঠিত সাইবার হেল্প ডেস্কে ১২ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে; যার ৭৫ ভাগই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক নিয়ে। সরকারের আইসিটি বিভাগ এ হেল্প ডেস্ক তৈরি করেছে। আর এ ডেস্ক থেকে জানা যায়, ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে হয়রানির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। ভুয়া আইডির কারণে সমস্যা ক্রমেই স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। কারণ, রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও এখন ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজ খোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের নামে ভুয়া আইডির বিষয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব ভুয়া পেজে বা আইডিতে বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নামে তৈরি বিভিন্ন আইডির পেজের একটি তালিকা তুলে ধরে বলা হয়, কিছু কিছু ফেসবুক পেজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের নামে নানারকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও খবর প্রকাশ করছে। আরও জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল কর্তৃক কোনো ফেসবুক পেজ পরিচালিত হয় না। এমনকি ভুয়া পেজগুলোর বিবরণে অ্যাডমিনরা লিখছেন যে, এ পেজ অফিশিয়াল কিংবা প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের সদস্যদের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত যা সম্পূর্ণ বানোয়াট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেখ হাসিনার নামে ব্যবহৃত ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা পেজগুলোয় বেশির ভাগই শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এগুলোর অধিকাংশেই অনিয়মিত ও অসংলগ্ন তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর একটির সঙ্গে আরেকটির তথ্যের মিল নেই। বেশির ভাগেই তার পরিচয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অথচ প্রধানমন্ত্রীর ফেসবুক আইডি নেই বলে গণভবন থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঝধলববন ডধুবফ নামের অ্যাকাউন্টটি ফেসবুক ভেরিফায়েড করেছে। অর্থাৎ এটি জয় নিজেই ব্যবহার করেন। কিন্তু তার নামে ফেসবুকে এর বাইরেও বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ও পেজ রয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামেও ফেসবুকে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। কিন্তু তার নামেও ফেসবুকে একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট আছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার নামে অননুমোদিত ফেসবুক পেজ খুলে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামেও বাংলা ও ইংরেজিতে অসংখ্য ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজের ছড়াছড়ি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের নামেও ফেসবুকে একাধিক ভুয়া আইডি তৈরি করেছে প্রতারক চক্রটি। তিনি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করলেও এর সুফল পাননি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সমাজের কুরুচিপূর্ণ কিছু মানুষ ফেসবুককে খারাপ কাজে ব্যবহার করছে। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা দুর্বল। অন্যদিকে ফেসবুকে ভুয়া আইডি ব্যবহারকারীদের প্রতিরোধে বিটিআরসিরও কারিগরি, যন্ত্রপাতি ও জ্ঞানের ঘাটতি আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকে আর্থিক সুবিধা লাভের জন্যও ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলছেন। কারণ, এখন আশঙ্কাজনকহারে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, ব্যবসায়িক পাতায় লাইক দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামে ভুয়া লাইকের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ভিআইপি, ব্যবসায়ী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফাঁদে ফেলে অভিনব কায়দায় কয়েকটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকটি চক্র ফেসবুকে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের টার্গেট করে প্রতারণা করছে। বিশেষ করে চক্রটি ফেসবুকে দেখতে সুন্দর কোনো মেয়ের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে টার্গেট ব্যক্তিদের বন্দু হয়। এরপর ফেসবুকের মাধ্যমে মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে কোনো রেস্টুরেন্ট বা বাসায় নিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে।

সর্বশেষ খবর