সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রার্থী এমপিদের আত্মীয়স্বজন

রাজনৈতিক কর্মীদের ক্ষোভ, মাশুল দিতে হতে পারে বলে শঙ্কা

রফিকুল ইসলাম রনি

আসন্ন পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে কিছু কিছু এলাকায় মেয়র পদে প্রার্থী করা হচ্ছে এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার আত্মীয়স্বজনদের। এ তালিকায় স্ত্রী, ছোট ভাই, ভগ্নিপতি ও বেয়াই রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনের জন্য যারা এতদিন মাঠ গুছিয়েছেন বা নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে ইমেজ তৈরি করেছেন তাদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর অনেকটা হঠাৎ করেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালী নেতা ও এমপিদের আত্মীয়স্বজনদের। এ নিয়ে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এবং মাঠের জনপ্রিয় নেতাদের দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসাদের প্রার্থী করা হলে মাশুল দিতে হতে পারে এমন আশঙ্কা তৃণমূল আওয়ামী লীগের। আগামী ডিসেম্বরে সারা দেশে ২৪২টি পৌরসভায় একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।  নির্বাচনী তফসিল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। আবার কোন প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে তা নির্ধারণ করেনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এসবের তোয়াক্কা না করেই তৃণমূলে অনেক এমপি-জেলার শীর্ষ নেতার স্ত্রী, ভাই, ভগ্নিপতিসহ আত্মীয়স্বজন দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এখন দলীয় প্রার্থী হিসেবে পোস্টার, বিলবোর্ড সাঁটিয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। প্রভাবশালীদের আত্মীয়স্বজনদের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।   

নেত্রকোনা  পৌরসভায় যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের ভাই যুবলীগ নেতা মাসুদ খান জনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও দুর্গাপুর পৌরসভায় উপমন্ত্রীর এক আত্মীয়কে প্রার্থী করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও নাটোর সদর পৌর নির্বাচনে প্রার্থী করা হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের ভগ্নিপতি সাজিদুর রহমান বুড়া চৌধুরীকে। বুড়া চৌধুরী ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তবে শিমুলের দাপটে কেউ মুখ খোলারও সাহস পাচ্ছেন না। 

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম তারিক, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বিটু এবং যুবলীগের আহ্বায়ক আল মাছুম মোর্শেদ শান্ত। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম তারিকের গ্রামের বাড়ি উপজেলার রতনপুর গ্রামে হওয়া সত্ত্বেও কয়েক মাস আগে কৌশলে পৌর এলাকার একটি ঠিকানা ব্যবহার করে তাকে পৌরসভার ভোটার করা হয়েছে। পৌর এলাকায় ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা না থাকলেও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের বেয়াই হওয়াতে তিনি এখন পৌর আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তফসিল ঘোষণা না হলেও তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলার সভাপতির প্রভাবে বিগত খোকসা ইউনিয়ন পরিষদের বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত প্রার্থী তারিককেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হচ্ছে পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনাইন রাসেলকে। বর্তমান পৌর মেয়র আবদুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতা উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ খানসহ একাধিক গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী থাকার পরও আসন্ন পৌরসভায় এমপির ছেলে রাসেলই শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী হতে পারেন এমন গুঞ্জন চলছে। এ জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অথচ এই রাসেলের বিরুদ্ধে রেলের জায়গা দখল করে দোকান করা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ এলাকার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভায় এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল লতিফ বিশ্বাসের স্ত্রী ইউপি চেয়ারম্যান আশানুর বিশ্বাস।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌরসভায় এবারও প্রার্থী হচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের ভাই গোলাম রব্বানী বিশ্বাস। অবশ্য তিনি বর্তমান পৌরসভার মেয়র। মাদারীপুরসহ সারা দেশে ২৪২টি পৌরসভার মধ্যে অধিকাংশ পৌর এলাকায়ই একই অবস্থা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ দৃশ্য আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে সারা দেশে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হবে বলে একাধিক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর