সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মান্ধাতার আমলে রয়ে গেছে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল

চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ

মান্ধাতার আমলে রয়ে গেছে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল নামেই আধুনিক। বাস্তবে কোনো আধুনিকতা নেই। কারণ এ হাসপাতাল এখনো রয়ে গেছে মান্ধাতার আমলে। যার কারণে রোগীর বদলে হাসপাতাল নিজেই ভুগছে নানান রোগে।

হাসপাতালের বর্তমান চিত্র হলো- পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, রোগীর জন্য পর্যাপ্ত সিট নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা কার্যকর কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা জানান, হবিগঞ্জ জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য পুরনো হাসপাতাল থেকে শহরের অনন্তপুরে স্থানান্তরিত করে ১৯৯৫ সালের ৬ জানুয়ারি এ হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। নাম দেওয়া হয় আধুনিক সদর হাসপাতাল। কিন্তু বাস্তবে এখানে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতির বালাই নেই। মান্ধাতার আমলের ৩টি এক্সরে মেশিনের একটি বিকল রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বাকি দুটি জোড়াতালি  দিয়ে চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেসিয়া) পদটি শূন্য রয়েছে। অ্যানেসথেটিস্ট পদটিও শূন্য রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ৪০টি ডাক্তার পদের মধ্যে ১৮টিই শূন্য। আরও শূন্য রয়েছে সিনিয়র স্টাফ নার্স ১১টি, তৃতীয় শ্রেণির ৭টি, চতুর্থ শ্রেণির ১৪টি পদ ও সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) পদ। সূত্র জানায়, প্রায় তিন বছর ধরে গাইনি কনসালটেন্ট পদটি শূন্য থাকায় ডাক্তার ভাড়া করে এনে চিকিৎসার কাজ জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। ফলে অনেক সময় গর্ভবতী মহিলাদের বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ছাড়া সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন)-এর পরিবর্তে কাজ করছেন অন্যজন। জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু)-এর বিপরীতে কনসালটেন্ট (শিশু) ডাক্তার জিয়াউর রহমান দায়িত্বে রয়েছেন। অপারেশন থিয়েটার ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কথা থাকলেও ডাক্তার ও নার্স সংকটের কারণে তা চালু করা সম্ভব হয় না। কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ দেখলেই বহির্বিভাগের ডাক্তাররা রোগী ফেলে পালিয়ে যান। তখন রোগীরা বাধ্য হন হাসপাতালের আশপাশের ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে। ডাক্তাররাও হাসপাতালে সময়মতো আসেন না। ওয়াকিবহাল সূত্রগুলোর অভিযোগ, হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই বিভিন্ন ক্লিনিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তারা হাসপাতালের বদলে ক্লিনিকেই বেশি সময় দেন। হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও জ্বালানি তেলের অভাবে সেগুলো ব্যবহৃত হয় না। তবে মোটা অঙ্কের টাকা খসালে চালু হয়ে যায় এগুলো। হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ ২০১৩ সালের জুলাই মাসের ১৮ তারিখ থেকে শুরু হলেও নানা জটিলতা, ঠিকাদারের অবহেলায় সে কাজ মন্থর গতিতে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর হবিগঞ্জ জেলা সফরের সময় নিউ ফিল্ড মাঠের জনসভায় অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি হবিগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছর মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও সাইড সিলেকশনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ওই স্থাপনের কাজ হয়নি। জানা গেছে, জটিলতা নিরসনে হবিগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহির জোর চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আবু জাহির জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের পাশে সাইড সিলেকশন মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলে হবিগঞ্জে চিকিৎসাসেবার অনেক উন্নতি হবে। জরুরি ভিত্তিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জোর দাবি জানান তিনি। রোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়লেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা-আবর্জনা ও কুকুর বিড়ালের সঙ্গে অবস্থান করতে হয় রোগী ও স্বজনদের। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে সেই রোগীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা ঢাকায় রেফার্ডের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে রোগীদের পথ্য ও খাদ্য সরবরাহের বেলায়ও অভিযোগের অন্ত নেই। ১০০ বেডের হাসপাতাল হলেও রোগীর সংখ্যা তিন শতাধিক হওয়ায় খাদ্য সংকটে অনেক রোগীকে বাইরে থেকে খাবার কিনতে হয়। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. অরুণ কুমার পাল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সাহেব শ্রীমঙ্গল থেকে এসে অফিস করেন। এখানে তার থাকার মতো কোনো কোয়ার্টার নেই। এ পদে স্থানীয় কাউকে দিলেই ভালো হতো। বর্তমানে যিনি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি একজন বয়স্ক মানুষ। চাকরির শেষ প্রান্তে তাকে এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর