সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রংপুরে হোশি ও খাদেম হত্যাকাণ্ডের ক্লু মিলছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

এক মাস ১২ দিনের মধ্যে রংপুরে দুটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডসহ তিনটি আলোচিত ঘটনা ঘটেছে। কাউনিয়া উপজেলায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে মাজারের খাদেম রহমত আলীকে। এ ছাড়া প্রকাশ্য দিবালোকে নগরীর আর কে রোডে নিজ বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তরা গুলি করে আহত করে বাহাই সম্প্রদায়ের নেতা ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) রুহুল আমিনকে। আলোচিত দুটি হত্যাকাণ্ড কেন এবং কারা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য আজ পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। দুটি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা রয়েছে তাদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একজন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কী তথ্য পাওয়া গেছে সে সম্পর্কে গণমাধ্যমকে স্পষ্ট করে কিছুই জানাচ্ছে না তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ দুক্ষুটি ঘটনাই রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। তবে পুলিশের দাবি, প্রতিটি ঘটনাই তারা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করছে। অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু জানানো সম্ভব নয়। গত ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টায় কাউনিয়া উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের চৈতার মোড়ে স্থানীয় একটি মাজারের খাদেম রহমত আলীকে এলোপাতাড়ি কোপানোর পর গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় বাসিন্দা ও মধুপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সদস্য মোর্শেদ আলী, শহিদুল ইসলাম ও আবু রায়হান রঞ্জুকে গ্রেফতার করার পর তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল তাদের রিমান্ড শেষ হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনোরঞ্জন রায় জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। খুনিদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। উদঘাটন হয়নি খুনের কারণ। এ ঘটনার এক মাস সাত দিন আগে একই উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন ৬৬ বছরের জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও। রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়ায় ভাড়া বাড়ি থেকে রিকশায় করে আলুটারি গ্রামে নিজের ঘাসের খামারে যাওয়ার পথে তিনজন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত তিনটি গুলি করে হত্যার পর মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কারা জড়িত, মূল পরিকল্পনাকারী কারা, খুনের উদ্দেশ্য কী এসব বিষয় এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে গুলির তিনটি খোসা উদ্ধার করা ছাড়া ব্যবহৃত অস্ত্রটির সন্ধান মেলেনি। তবে ব্যালাস্টিক প্রতিবেদনে অস্ত্রের ধরন নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোশি কোনিও হত্যায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার হয়েছে সেটি নাইন এমএম পিস্তল। যা দেশেই তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয়ে তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করে। পুলিশ কোনিওর বাড়িওয়ালাসহ রংপুর, রাজশাহী ও পাবনা থেকে ৮ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে কোনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবীর হীরা ও মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন নবী খান বিপ্লবকে ওই মামলায় আসামি দেখানো হয়। বিপ্লবকে ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। আর তিন দফায় ২৫ দিন রিমান্ড শেষে হীরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি কী বলেছেন তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও আদতে তিনি খুনের সঙ্গে জড়িত কিনা, কার নির্দেশে এই খুন হয়েছে সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। হীরাও এখন কারাগারে। তবে আটকদের মধ্যে কোনিওকে আনা-নেওয়া করা রিকশাচালক মোন্নাফ আলী ছাড়া অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে র‌্যাবের হাতে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক রংপুরের যুবলীগ ও যুবদলের তিন নেতাকে কোনিও হত্যা মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাউনিয়া থানার ওসি এবিএম জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর সে জন্য তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। আর এ কারণেই জনমনে বিষয়টি রহস্যাবৃত মনে হচ্ছে। এদিকে গত ৮ অক্টোবর সকালে নগরীর আর কে রোডে রিকশায় ওঠার সময় তিন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে করে এসে বাহাই সম্প্রদায়ের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ও রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী রুহুল আমিনকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। একটি গুলি বুকের ওপর বিদ্ধ হয়। অন্যটি বাম পায়ে লেগে চলে যায়। এ ঘটনায় রুহুলের স্ত্রী সাইফুন নাহার বাদী হয়ে হত্যা চেষ্টার মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রমেক হাসপাতাল চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান নয়ন, সমিতির সাধারণ সম্পাদকের ছেলে সজল ও সাবেক সম্পাদকের ভাই আবু রায়হানকে আটকের পর ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুক্রবার কারাগারে পাঠায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মকবুল হোসেন জানান, কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত থাকার কথা তারা স্বীকারও করেছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর