সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
মেয়র আনিসের উদ্যোগ

বাগান-বিলাসে সাজছে ঢাকা

লাকমিনা জেসমিন সোমা

বাগান-বিলাসে সাজছে ঢাকা

শহরজুড়ে যানজট। চারপাশে দূষিত পরিবেশ। ইট-কাঠ-পাথরের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে সবুজ। বাতাসে কমে যাচ্ছে অক্সিজেন। রাজধানীর চিরচেনা এই যান্ত্রিকতার মাঝেই গতকাল জাহাঙ্গীর গেট সংলগ্ন শাহীন স্কুলের সামনের মূল রাস্তাটিতে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সেখানে সবুজ পাতা আর বাহারী রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে সম্পূর্ণ ফুটওভার ব্রিজটি। এ যেন নগরবাসীর  বিষিয়ে ওঠা জীবনে এক টুকরো ভালোলাগা; ধুলো জমা চোখে হঠাৎ একটু প্রশান্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এ ব্রিজটির মতোই উত্তর সিটির বাকি প্রায় ৫০টি ফুটওভার ব্রিজও এভাবে বাগান বিলাস ফুলে ছেয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন মেয়র আনিসুল হক। এরই অংশ হিসেবে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে পরীক্ষামূলকভাবে গতকাল শাহীন স্কুলের সামনের ব্রিজটিতে সাদা, লাল ও ম্যাজেন্টাসহ বাহারী রঙের বাগানবিলাস রোপণ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এ কাজে সহযোগিতা করছেন বিশিষ্ট নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। মূল দায়িত্বে আছেন করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘুরে যান মেয়র আনিসুল হকও। ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, মেয়র আনিসুল হকের প্রতিশ্রুত ‘গ্রিন সিটির’ আওতায় নগরীর আওতাভুক্ত প্রায় ৫০টি ফুটওভার ব্রিজে স্থায়ীভাবে বাগানবিলাস লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি ছোটখাটো ফ্লাইওভার ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ির ছাদে সবুজায়নের এ কাজ করা হবে। বিনা খরচে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার জন্য নেওয়া হয়েছে আরও বেশ কিছু উদ্যোগ। এ প্রসঙ্গে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস গবেষণার মাধ্যমে তারা সবুজায়নের এ কাজটি শুরু করেছেন। এতে নগরবাসী কেবল বিশুদ্ধ অক্সিজেনই পাবে না, রাজধানীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও এটি ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া প্রকৃতির সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ যাতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে আরও উদ্বুদ্ধ হয়, সে ধারণা থেকেও এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা এড়াতে ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন তারা। এ ছাড়া বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন তৈরিতে গাছগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। মোবাশ্বের হোসেন জানান, রাতের বেলায় ব্রিজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করবেন তারা। নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদ জানান, শাহীন স্কুলের সামনের ব্রিজটিতে লকিং ডিভাইজ সমৃদ্ধ মোট ২৪টি কংক্রিটের টবে ৭২টি বাগানবিলাস লাগানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মূলত ম্যাজেন্ডা এবং সাদা রঙের ফুলই বেশি পছন্দ করছেন তারা। তবে কেবল বাগানবিলাস নয়, ব্রিগুলোর ছাদের ওপরও লাগানো হবে ক্রিপার বা ঝুলন্ত লতাপাতা গাছ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এ ব্রিজগুলো রক্ষণাবেক্ষণে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার পরিকল্পনা করছে। করপোরেট হাউসগুলোকে কয়েকটি ব্রিজের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিনিময়ে তারা সিটি করপোরেশনের নীতিমালা এবং প্লান-পরিক্রমা ও নকশা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট স্টাইলে ওই ব্রিজটি তাদের বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এদিকে গতকাল গাছগুলো লাগানোর পর সেখানে গিয়ে কয়েকজন পথচারীকে গাছের ডাল-পাতা ছিঁড়তে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকিং ডিভাইজ সিস্টেমের কারণে টবগুলো চুরি যাওয়া বা ভেঙে ফেলার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে লোকজন যাতে নিজের ফুল বাগানের মতোই এই ফুলগুলোকে ভালোবাসতে পারে সে জন্য মানসিকতার উন্নয়ন প্রয়োজন। আর সেটি করতে সচেতনতা বৃদ্ধি অভিযানও অপরিহার্য। এর আগে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নগরপিতা আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, ‘গ্রিন সিটি’ নিয়ে নগরবাসীর জন্য তার একটি বিশাল ‘সারপ্রাইজ’ অপেক্ষা করছে। তিনি জানিয়েছিলেন, বাগানবিলাসে ছেয়ে ফেলবেন ফুটওভার ব্রিজগুলো। কেবল তা-ই নয়, নগরীকে আরও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে তুলতে, কাঠবিড়ালী ও প্রজাপতির বাগান করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন মেয়র আনিসুল হক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর