মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

শয্যা বেড়েছে, মান বাড়েনি মানিকগঞ্জ হাসপাতালে

মো. কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ

শয্যা বেড়েছে, মান বাড়েনি মানিকগঞ্জ হাসপাতালে

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের অবকাঠামোর উন্নতি হলেও বাড়েনি চিকিৎসাসেবার মান। ৫০ থেকে ১০০, এরপর ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। তারা সঙ্ঘবদ্ধ দুষ্টচত্রের কাছে জিম্মি। কর্মচারী থেকে শুরু করে অনেক ডাক্তারই ক্লিনিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ফলে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা না দিয়ে কৌশলে ক্লিনিকে রোগী পাঠাতে ব্যস্ত থাকেন তারা। কিছু ডাক্তার হাসপাতালে দায়িত্ব পালন সময়ে চলে যান ক্লিনিকে। ফলে রোগীরা টিকিট কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রায় প্রতিদিন ডাক্তার ও রোগীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। ডাক্তারের আচরণে ক্ষুব্ধ এবং সরকারি হাসপাতালে সেবাবঞ্চিত রোগীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হন। এ সুযোগে হাসপাতালের  আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট

ক্লিনিক। এ ছাড়াও হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীর-ঘেঁষে গড়ে উঠেছে খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর দৈনদিন বর্জ্য হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীরের ভিতর ফেলা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে হাসপাতাল এলাকাজুড়ে থাকে পুতিগন্ধময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা হাসপাতাল  চত্বরে প্রবেশ করামাত্রই দালালের খপ্পরে পড়েন। চিকিৎসার পরিবর্তে অধিকাংশের ভাগ্যে জোটে শুধুই অর্ধশ্রাদ্ধ এবং হয়রানি। কর্তব্যরত ডাক্তাররা কমিশন লাভের জন্য প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও বিভিন্ন পরীক্ষা লিখে দেন। কয়েকজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে রোগীদের অভিযোগ তারা হাসপাতালে বসে নির্ধারিত ফি আদায় করেন ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্য। ভর্তি রোগীদের অনেকের অভিযোগ, হাসপাতালের নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যে সেবা পাওয়ার কথা তার কিছুই পান না। সব ওষুধপত্র বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়। আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন দু-একটি কম দামি ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হলেও দামি ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হয়। হাসপাতালে প্রবেশের দুটি রাস্তার মধ্যে একটি বন্ধ করে কয়েকটি পাকা দোকানঘর তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতাল চত্বরের বৃহৎ একটি অংশ নার্সারির জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মনে হয় নার্সারির জায়গা ভাড়া নিয়ে হাসপাতাল করা হয়েছে। হাসপাতাল ভবনের বাইরে এ অরক্ষিত জায়গায় অবাধে বিচরণ বিভিন্ন শ্রেণির দালাল, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীর। রাতের আঁধারে এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে নির্দ্বিধায়। অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে হাসপাতাল চত্বরে বিভিন্ন গাড়ি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে দেখা যায়। হাসপাতাল থেকে ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ নিত্যদিনের।

অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর বিষয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। মানিকগঞ্জ সদর ছাড়াও জেলায় আরও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এগলো হলো হরিরামপুর, ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয়, সাটুরিয়া ও সিংগাইর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এসব হাসপাতালে অধিকাংশ দিনই বেশির ভাগ ডাক্তার থাকেন অনুপস্থিত। কেউ কেউ উপস্থিত হন দায়সারাভাবে। চলতি বছরের শুরুর দিকে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুপস্থিত এক ডজনের বেশি ডাক্তারের বিরুদ্ধে একযোগে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয় মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে। অদৃশ্য কারণে তা আবার ধামাচাপা পড়ে যায়, অভিযুক্তরা এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। সিভিল সার্জন ডা. মো. ইমরান আলী নানা অভিযোগের বিষয়ে জানান, ‘আমি কিছু দিন আগে এখানে দায়িত্ব পেয়েছি। ইতিমধ্যে নার্সারি অপসারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে হাসপাতালের ভিতর বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হবে। ৫০ শয্যা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ওষুধপত্র-লোকবল এখনো আগের মতোই; যার কারণে সব রোগীকে সঠিক সেবা ও ওষুধপত্র দেওয়া সম্ভব হয় না। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা হাসপাতালে অবস্থান করেন না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডাক্তার ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে এগুলো পুরনো। এদের ব্যাপারে আমার কঠোর নজরদারি রয়েছে। কোনো ডাক্তার ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের বন্ধ রাস্তাটি খুব শিগগিরই খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ডাক্তারের সংকট না থাকলেও গার্ড ও মালী নেই, রয়েছে সুইপার সংকট; যার কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর